ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

আ. লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে টাইম সাময়িকীকে যা বললেন ড. ইউনূস

আ. লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে টাইম সাময়িকীকে যা বললেন ড. ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে স্বাগত জানানো হবে। তবে শর্ত হলো, এর আগে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিচার হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন, তারা যে কারও মতো স্বাধীনভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আমরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।


সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, ঢাকার রাস্তাগুলো মাইলের পর মাইলজুড়ে শেখ হাসিনার কার্টুন আঁকা হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

তবে দেয়াল চিত্রের ভাষা নিয়ে নোবেল বিজয়ী তরুণদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, এই শব্দগুলো খুবই বিস্ফোরক। কিন্তু তরুণদের মস্তিষ্কে আছে আইডিয়া, উচ্চাশা আর স্বপ্ন। তারা এই মুরালগুলোতে তাদের ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছে, যা বাংলাদেশের আগে কখনও দেখা যায়নি।

ইউনুস বলেন, পূর্ববর্তী সরকার পুরোপুরি দমনমূলক পরিবেশ তৈরি করেছিল। হত্যা, গুম, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিল। এটি ছিল একটি ফ্যাসিবাদী শাসন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, প্রথমে আমি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, অন্য কাউকে খুঁজে নাও। কিন্তু পরে ভাবলাম, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে, তাদের সম্মান জানিয়ে আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তার বক্তব্য নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, তিনি ভারতে শুধু আশ্রয় নেননি, বরং সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অস্পষ্ট বৈধতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন—যেমন সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইউনুসের বৈঠক—বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মতো সংস্থাগুলোর আস্থা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ক্ষমতায় ফেরা গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

অক্টোবরের শেষ দিকে ট্রাম্প এক্স-এ পোস্টে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা নিন্দা করে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।’

ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনুসের সম্পর্কও জটিল। তিনি ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়কে ‘ভয়ানক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে ইউনুস আত্মবিশ্বাসী যে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সাহায্য চাইছি না; আমরা একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই।’

এতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় প্রভাবশালী মহল বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে লবিং করছে বলে ধারণা বিরাজ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, সংস্কার প্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ চলছে, কিন্তু এটি রাষ্ট্রপতি নাকি সংসদীয় পদ্ধতির দিকে যাবে, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটি স্বৈরাচারী মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।

তবে নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে নারাজ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, প্রথমে রেল ঠিক করতে হবে, যাতে ট্রেন সঠিক পথে চলে। তাই এখনই কোনও তারিখ নির্ধারণ হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি ২০০৬ সালে ৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ড. ইউনুস জানেন, জনগণের জীবনের মান উন্নয়ন করাই একমাত্র উপায়, যাতে স্বৈরতন্ত্র আবার ফিরে না আসে। তিনি বলেন, এই বিপ্লবের মূলে রয়েছে সংস্কার। তাই আমরা একে বলি বাংলাদেশ ২.০।

টাইমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি বাদ দিলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন হতে পারে। দলের অনেক নেতা বলছেন, তাদের সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন