নিয়ন্ত্রণহীন বাজার, সব পণ্যের দামে আগুন


প্রতি সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েই চলছে। আগের দুই সপ্তাহে ১০ টাকা করে বাড়লেও চলতি সপ্তাহে একলাফে বেড়েছে ২০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বরাবরের মতো এবারও বলছেন, দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের কালোহাত দায়ী। পেঁয়াজের দাম এই মুহূর্তে কমার কোনও সম্ভাবনাও নেই। বরং আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগও নেই। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।
এদিকে বাজারে সব ধরনের সবজির দামেও ঊর্ধ্বগতি। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে রয়েছে বিক্রেতারা দেখাচ্ছেন বৃষ্টির অজুহাত। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়তই চাপ বাড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। বাজার করতে আসা ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর সাগরী বাজার, রূপাতলী বাজার, বাংলা বাজার, পোর্টরোড কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ছোট সাইজের ১১০ ও বড় সাইজের পেয়াঁজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নগরীর সাগরী বাজারের বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সিন্ডিকেট। তাঁরা পেঁয়াজ কিনে স্টক করে রেখে দেয়। তাঁরপর বাজারে টান (সংকট) ফেলে বেশি দামে বিক্রি করে।
এসময় আরেক বিক্রেতা হানিফ মিয়া বলেন, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ দেশে আসছে বলে এখন ১০০ বা ১২০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে পারছে মানুষ। না হলে এতদিনে ২০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ খাওয়া লাগতো। আর এই মুহূর্তে পেঁয়াজের কমবে না বলেই মনে হচ্ছে। বরং আরও বাড়তে পারে।
এছাড়া লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, দেশি রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, সব ধরনের লাল ও সাদা আলুর দাম উচ্চমূল্যে অপরিবর্তিত রয়েছে। আর চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
শুধু পেঁয়াজের দামই না, বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী দামে। টমেটো ১০০,
শসা ১২০, উচ্ছে ১২০, করলা ৮০, কাঁকরোল ৮০, পেঁপে ৬০, ঢেঁড়স ৮০, পটোল ৬০- ৮০, চিচিঙ্গা ৮০, ধুন্দল ৮০, ঝিঙা ৮০, বরবটি ১২০, কচুর লতি ১০০, কচুরমুখী ১০০, লম্বা বেগুন ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-৮০, চাল কুমড়া ৫০, ফুলকপি ৬০, বাঁধাকপি ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০, লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া উচ্চ দামে অপরিবর্তিত বেশ কিছু সবজির দাম।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পোর্টরোড কাঁচাবাজারের বিক্রেতা নয়ন হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি হচ্ছে। যেরকম সবজি আসার কথা সেটা আসছে না। তাই এখন দাম বেড়ে গিয়েছে।
আরেক বিক্রেতা শহিদুল বলেন, বর্ষাকালে বন্যা হয়, তখন এমনিই সবজির দাম বেড়ে যায়। শীতকালে সবজির দাম কম থাকে।
এসময় বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারা বছরই তো বেশি দামে সবকিছু কিনতে হচ্ছে। আলাদা করে আর বর্ষাকালের কথা বলে লাভ কী! আর ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে মনে হয় সারা বছরই তাঁরা কোনও না কোনও ক্ষতির মুখে আছেন। তো এত যখন তাদের সমস্যা তাহলে ব্যবসা ছেড়ে অন্য কাজ করে না কেন! তাদের খালি লসই হয়, আর আমরা আছি মহাসুখে!
আরেক ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের খরচ খালি বাড়েই। বেতন তো বাড়ে না। সবকিছুর দাম বেশি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
এদিকে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে।
ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কয়েকটি মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। মসুরের ডাল ইন্ডিয়ান ১১০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এমএন
