ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news
 ভয়ে পালিয়ে গেছেন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী  

বাউফলের চন্দ্রদ্বীপে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, দোকানে তালা

বাউফলের চন্দ্রদ্বীপে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, দোকানে তালা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের ভাতিজা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারশ প্রতীকের এনামুল হক ওরফে আলকাছ মোল্লা।

অভিযোগ রয়েছে,নির্বাচনের ফল ঘোষনার পর পরই আনারশের কর্মী-সমর্থকেরা কয়েক দফায় নৌকার নেতা-কর্মী  সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালান। ভয়ে পালিয়ে গেছেন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমির হোসেন হাওলাদারসহ অনেকে।

নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন বলেন,নির্বাচনের আগে গত শুক্রবার (১৮ জুন) সমাবেশ করে ফিরোজ ভাইর (সাংসদ ফিরোজ) ভাতিজা আলকাস মোল্লা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন নৌকার পক্ষে যাঁরা থাকবেন নির্বাচণের পর তাঁদেরকে বিতারিত করবেন।যাঁর ভিডিও তিনি তাঁর (আলকাস) ফেসবুক আইডি থেকে সরাসরি প্রচার করেছেন। তাঁর প্রকাশ্য ওই নির্দেশ অনুযায়ী আনারশের কর্মী-সমর্থকেরা নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি ও হামলা চালাচ্ছে। অনেকের গরু লুট করে নিয়ে গেছে। অনেক দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।ভয়ে পালিয়ে গেছে নৌকার দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। তিনি আরও বলেন,আপনারা লেখেন।আমাকে বাঁচান, চসন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে নৌকার কর্মীদের বাঁচান।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ছালাম শরীফ বলেন,নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর পরই তাঁকে ধাওয়া করে আলকাস মোল্লার কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ প্রশাসন তাঁকে উদ্ধার করে। পরে তিনিসহ নৌকার আরও ২৫ নেতা-কর্মী পালিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।  মঙ্গলবার তাঁর চর রায় সাহেব এলাকার দোকানে হামলা চালানো হয়।

তিনি আরও বলেন,আজ সকালে রায় সাহেব গুচ্ছগ্রামের মো. হেলাল গাজী (৫০) নামে নৌকার সমর্থককে গুচ্ছ গ্রাম থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ডিয়ারা কচুয়ার নৌকার কর্মী মো. সাইফুল ইসলামকে (৩০) আনারশের সমর্থকেরা আলকাস মোল্লার সামনে বসে পিটিয়ে আহত করেছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আজ দুপুরের দিকে পশ্চিম চর মিয়াজান বাজারের তাঁর ওষুধের দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছে নব নির্বাচিত আনারশ প্রতীকের সমর্থকেরা।এমনকি তাঁকে যেখানে পাবেন সেখানে মারারও হুমকি দিয়েছে আনারশের সমর্থকেরা।তাঁদের ভয়ে তিনি এবং পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. বাবুল বেপারি মুঠোফোনে  বলেন,‘আমাকে পেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওযা হয়েছে। এ কারণে ট্রলারে করে ১৭ নেতা-কর্মী নিয়ে সোমবার রাতেই তিনি ভোলায় পালিয়ে যান।’

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘নৌকায় যাঁরা ভোট দিয়েছে তাঁরা মনে হয় অনেক অপরাধ করেছে। আর এ কারণেই তাঁদেরকে মারধর করা হচ্ছে। এলাকা ছাড়া্র হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনিসহ অনেককেই এলাকা ছাড়তে হয়েছে।’ তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌকার কর্মী ওই ইউনিয়নের চর মিয়াজান এলাকার মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার (৫০), মো. শাহিন পণ্ডিত (৩৫), সুলতান মাতুব্বর (৫০), মৌজে আলী হাওলাদার (৬০), নজরুল মৃধা (৩৮), আনোয়ার হাওলাদারের (৩৫) দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে চরওয়াডেল খানকা এলাকায় মো. সবুজ জোমাদ্দার (৩০) নামে নৌকার এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে আনারশের কর্মীরা।যদিও হামলা ও মারধরের ভয়ে গত সোমবার রাতেই ট্রলারে করে পালিয়ে যান সবুজ।

একই এলাকার  মো. জাকির হোসেন চৌকিদার (৪০) নামে নৌকার এক কর্মীর মাছের আড়তে গত সোমবার রাতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে আলকাসের সমর্থকেরা ।আজ সকালে জাকিরের দুইটি ও মো. ইউসুফ রাঢ়ীর একটি গরু নিয়ে যান আলকাসের সমর্থকেরা।যদিও পরে গরু তিনটি দিয়ে দেওয়া হয়। তবে জাকির হোসেন এবং ইউসুফ রাঢ়ী (৫৫) ও তাঁর দুই ছেলে মো. রুহুল আমিন (২৫) ও মো. আল আমিনকে (১৮)নিয়ে সোমবার রাতে ট্রলারে করে তাঁরা নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যান।

সোমবার সন্ধ্যা সাতটা ও আটটার দিকে দুই দফায় হামলা চালানো হয় চরওয়াডেল খানকা এলাকার মো. আশরাফ আলী চৌকিদারের তিন ছেলে মো. চান মিয়া (৪০), মো. কুদ্দুসুর রহমান (৩২) ও মো. শহিদুলের (২৫) বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ভয়ে ওই রাতেই তিন ভাই পালিয়ে যান। সোমবার সন্ধ্যায় হামলা চালানো হয় আবদুল কাদের মাঝির (৫০)চায়ের দোকানে।

আশরাফ আলী চৌকিদার (৬৮) বলেন,নৌকায় ভোট দেওয়ায় সোমবার দুপুরে আলকাস মোল্লা তাঁকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সন্ধ্যার পর দুই দফায় তাঁর বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

এ বিষয়ে এনামুল হক ওরফে আলকাস মোল্লা বলেন,‘আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাইতো আমার কর্মী-সমর্থক। মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধের জেরে এক/দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটার খবর পেয়েছি। তবে আমি আমার নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছি।’ তিনি আর ও বলেন,ভাগ্য ভালো যে, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তা না হলে চন্দ্রদ্বীপে রক্তের বন্যা বয়ে যেত।

উল্লেখ্য চন্দ্রদ্বীপ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় এক নম্বর ক্রমিকে ছিল স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের ভাতিজা এনামুল হকের নাম। তিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়ন পান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন হাওলাদার।

কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি সাংসদ ফিরোজ। এ কারণে তিনি নৌকার সমর্থন করেননি। এমনকি ইউপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নৌকার প্রার্থীকে পরামর্শ দেন পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজ। শুধু পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি; নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ওই প্রার্থীর ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করেন সাংসদ। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সাংসদ ফিরোজের কথাসংবলিত ৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন