ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news
সবকিছু জেনেও নিশ্চুপ হাসপাতাল কর্তৃপক্

বিতর্কিত কাজে জড়াচ্ছে শেবাচিম হাসপাতালে আনসাররা

বিতর্কিত কাজে জড়াচ্ছে শেবাচিম হাসপাতালে আনসাররা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধ ও দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণসহ শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োগ করা হয় আনসার সদস্য। কাজের বিনিময়ে মাস শেষে সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা, আবাসনসহ সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না তাদের দিয়ে।
বরং নানা বিতর্কিত কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা। রোগীর স্বজনদের মারধর, রোগীর খাবার গ্রহণ, দালাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন আদায় এমনকি ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ফলে কাজের কাজ না হলেও প্রতি মাসে আনসারদের পেছনে লাখ লাখ টাকা গচ্ছা দিচ্ছে সরকার। আর এই বিষয়টি অকপটেই স্বীকার করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।


তিনি বলেছেন, ‘যেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে হাসপাতালে আনসার নিয়োগ করা হয়েছে, তার কিছুই হচ্ছে না। বরং মাসে মাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আনসার বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কাগজে-কলমে এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে প্রায় আড়াই হাজার। তাদের সাথে দর্শনার্থী থাকে আরও চার হাজারের বেশি।


ফলে হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হয়। সেই সাথে হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ এবং মালামাল চুরি, ছিনতাই, দালাল সিন্ডিকেট, রোগীর দালাল প্রতিরোধে আনসার সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি।


এর প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে হাসপাতালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাসিক বেতন ভিত্তিতে ৪০ জন আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়। সেই সাথে আইন বহিঃর্ভুতভাবে সরকারি স্টাফদের বরাদ্দ বাতিল করে আনসার সদস্যদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারে। বিদ্যুৎ, পানি এবং পরিচ্ছন্নতাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে তাদের। কিন্তু বাস্তবে তাদের দিয়ে কোন কাজই হচ্ছে না।


হাসপাতালে কর্মরত একাধিক সরকারি কর্মচারী, রোগীর স্বজন এবং হাসপাতাল এলাকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য সফল না হলেও আনসার সদস্যরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। তারা বেতনের বাইরেও সিন্ডিকেট করে দৈনিক হাজার হাজার অবৈধ টাকা তুলছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, হাসপাতাল চত্বরে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। দোকান প্রতি তিন শিফটে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন আনসার সদস্যরা। কেউ টাকা দিতে না পারলে হাসপাতাল এলাকায় তাদের দোকান  নিয়ে বসতে দেয়া হয় না । এছাড়া বিনা টাকায় চা-নাস্তা তো রয়েছেই।


এছাড়া বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী নিতে সহযোগিতা করায় সেখান থেকেও দিনের শেষে পান কমিশন। এর ফলে তাদের সামনে থেকে হাসপাতালের রোগী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলেও বাধা দেয়া হয় না। হাসপাতাল চত্বরে প্রতিদিনই ঘুরে বেড়ায় দালাল চক্র। তাদের সাথেও শখ্যতা গড়ে তুলে কমিশন নেন তারা। এমনকি হাসপাতালে রোগীদের জন্য রান্না করা খাবার খেয়ে দিন পার করছেন অনেকে।


হাসপাতালের স্টাফ এবং রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, নিয়োগের পর থেকে এ পর্যন্ত আনসার সদস্যদের মাধ্যমে বড় কোন সফলতা দেখা যায়নি। হাসপাতাল পরিচালকের নিরাপত্তা ছাড়া রোগী কিংবা চিকিৎসক কেউ সুফল পাচ্ছে না আনসারদের কাছ থেকে। বরং একাধিকবার বিতর্কে জড়াতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ২০২৩ সালে বিনা উসকানিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায় আনসার সদস্যরা। এই ঘটনায় চারজন আনসার সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।


এছাড়া হাসপাতালে ইতিপূর্বে দায়িত্বরত আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন জড়িয়ে পড়েন নানা বিতর্কিত কর্মকাÐে। এজন্য তাকেও প্রত্যাহার করা হয় হাসপাতাল থেকে। ইতিপূর্বে হাসপাতালের সরকারি মালামাল চুরি করে পালানোর অভিযোগও রয়েছে আনসারদের বিরুদ্ধে।
 অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান প্লাটুন কমান্ডারের নেতৃত্বেই হাসপাতাল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদাবাজিসহ কমিশন বাণিজ্য চলছে।


এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মূলতঃ যেই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে আনসার নিয়োগ করা হয়েছিল তার কিছুই হচ্ছে না। এ কারণে আরও একশ আনসার সদস্য নিয়োগের অনুমোদন থাকলেও সেটা কার্যকর করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘এখানে চল্লিশজন আনসারের বেতন দেয়া হলেও সবাই হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে না। বিষয়টি নিয়ে আনসার বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছি। কিন্তু কোন সুফল আসেনি। তাই নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে আনসার নিয়োগ এবং যারা আছে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
 


এমএন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন