আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বিছিন্ন হয়ে আছি: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী


‘আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বিছিন্ন হয়ে আছি’ বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। তিনি বলেছেন, ‘একজনের যদি চিন্তাধারা থাকে বরিশালবাসীকে সেবা করার, আমি মনে করি হাসপাতালে রোগীদের সেবা দানের মাধ্যমেই আমরা বরিশালের মানুষদের সেবা দিতে পারি।’
দক্ষিণ বাংলার সর্ববৃহৎ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে বিদ্যমান চিকিৎসা সমস্যা সমাধানে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
শুক্রবার রাতে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বরিশালের সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি’র দায়িত্ব পাওয়ার পর চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের এটাই প্রথম মতবিনিময় সভা।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের শেষ ভরাসাস্থল শেবাচিম ও জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ এবং মতামত তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী’র নিকট। পরে জনগণের মতামতের বিষয়ে গুরুত্বারোপ এবং সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে দুটি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৩ জুন আমাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে একটিমাত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০০ শয্যা ছিল। এখন তা এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিগত বছরগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন থেকে রাজনীতিতে এসেছি এবং ২০০৮ সাল থেকেই আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের সেবা করার। আমি সবসময় নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করতাম। আল্লাহতালা আমার দোয়া কবুল করেছেন।
জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমরা এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে যে স্বাস্থ্য সেবা পাইনি, এর জন্য যেসব ভুলত্রুটি আছে সেগুলো আপনা তুলে ধরেছেন। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত এবং পরামর্শ নেয়ার জন্য আপনাদের আমি এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আপনাদের মতামত এবং পরামর্শ কাজে লাগিয়েই আমরা ভবিষ্যতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সামনে এগিয়ে যাবো।
এর আগে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
এসময় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে একজন কর্মকর্তা পদায়নের জোর দাবি জানান অংশগ্রহণকারীরা।
এর পাশাপাশি শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ’র উন্নয়ন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এনজিওগ্রাম মেশিন চালু করা, আবাসিক চিকিৎসক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কোর্স চালু করা, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ডায়াগনস্টিক সেবা চালু রাখা, গবেষণা চর্চা ও শিক্ষামূলক ব্যবস্থা চালু করা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি পরিচালকের মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম নিশ্চিত করা, হাসপাতালের শয্যা সংকট দূর করতে নতুন করে জমি ক্রয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা করার দাবি জাননো হয়।
এছাড়াও হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, চোখের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সেলিস মেশিনসহ অকেজো সব ধরনের আধুনিক যন্ত্র মেরামত বা সংযোজন করা, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে বাথরুম এবং টয়লেট পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোড়ালো করা, হাসপাতালের অভ্যন্তরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং বন্ধ করা এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের যথাযথ ব্যবহার ও জেনারেল হাসপাতালে নতুন অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং রোগীর দালাল নির্মূল করা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ইউনিফর্ম নিশ্চিত করা এবং হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিমাসে একবার করে সবাইকে নিয়ে সভা করার পরামর্শ দেন অংশগ্রহণকারীরা।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আনোয়ার হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম, বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা প্রমুখ।
এইচকেআর
