ঈদের ৯দিন পরও কমেনি বরিশাল-ঢাকা বাস ভাড়া


ঈদের নয়দিন পরও বরিশাল থেকে ঢাকাগামী অধিকাংশ পরিবহনগুলোতে এখনো বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। ফলে দ্বিগুণ ভাড়া গুনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন যাত্রীরা।
তাদের অভিযোগ, পরিবহন মালিকেরা সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে তাঁদের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।
যাত্রীরা জানান, বরিশাল থেকে ঢাকা সায়েদাবাদ ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। কিন্তু এখন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বেশি।
ঈদের ছুটি শেষে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকায় ফিরতে টিকিট করেন সাগর আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, সামনে পরীক্ষা। দ্রæত ঢাকায় ফিরতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। ঈদের বকশিশ নাম দিয়ে যাত্রীদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যাত্রী বলেন, পরিবহনে এরকম ভাড়া বাড়িয়ে হয়রানির বিষয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার পর তারা সবাই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দেয়। কিন্তু তদন্তই আর হয় না। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।
আরেক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকায় একটি জরুরি কাজে যাবো, তাই ৭০০ টাকা দিয়ে ইলিশ পরিবহনে একটি টিকিট নিলাম। তিনি বলেন, ঈদের ৪-৫দিন আগেও এই ভাড়া দিয়ে ঢাকা গেছে মানুষ।
কিন্তু আজ (বুধবার) ৯ দিন হলো ঈদ শেষ, এরপরেও কমেনি ভাড়া। যেতে হবে তাই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে গন্তব্য রওয়ানা দিলাম।
তিনি বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জেনেও চুপ থাকে। কারণ তাদের সাথে পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছ থেকে এই টাকার অংশ বিশেষ পকেটে যায়। তাদের এমন আচরণের কারণে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে।
পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুসারে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন ইলিশ পরিবহনের হেলপার নয়ন খান। তিনি বলেন, এখন টিকিটপ্রতি ১০০ টাকা বেশি, অর্থাৎ ৭০০ টাকা করে নিচ্ছি। ভাড়া বেশি নিলেও শ্রমিকদের কোনো লাভ নেই। ঈদ উপলক্ষে আমাদের নামে মাত্র বোনাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ১০ ট্রিপ যাত্রী আনা-নেওয়া করছি।
তবে অনেক পরিবহনকে যাত্রীদের কাছ থেকে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া নিতে দেখা গেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে নগরীর কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাসর্টামিনালে গিয়ে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী ইলিশ পরিবহনে যাত্রীদের কাছ ৪০০ টাকা ভাড়া ৫০০ টাকা এবং এসি ৬০০ টাকার স্থলে ৭০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অনেক যাত্রী সাংবাদিকদের কাছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করলে তাদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হয় না বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
নির্ধারিত চেয়ে এখনো ভাড়া দ্বিগুণ নেয়ার কারণ জানতে চাইলে পরিবহনটির কাউন্টারে টিকিট বিক্রেতা আসিফ হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্য গাড়ি আসতে চায় না। কারণ এখন ঢাকা থেকে বেশি যাত্রী নেই। বরিশাল থেকে যাত্রী পেলেও পরিবহন নেই।
তাই ঈদ উপলক্ষে একটু বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি। তিনি বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বরিশাল থেকে যাত্রীদের চাপ থাকবে বলে জানিয়েছেন আসিফ হোসেন।
একই অবস্থা গ্রামীন পরিবহনেও। এখনো ৭০০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত রেখেছে তাঁরা। তবে ভাড়া কমিয়ে সাকুরা এসি ভাড়া ১০০০ টাকার স্থলে কমে ৭০০ টাকা ও নন এসি ৫০ টাকা কমিয়ে ৬৫০ টাকা, বিএমএফে ২০০ টাকা কমিয়ে ৪০০ টাকা, হানিফে ৬০০ টাকার ভাড়া ৫৫০ টাকা, গোল্ডেন লাইনে ৭০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
ঢাকার প্রধান অফিসের নির্দেশে ভাড়া কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব পরিবহনের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কাউন্টার ক্লাক। এদিকে সরকারী প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি বাসেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মতবাদে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নটক নড়ে। এ কারণে গত মঙ্গলবার থেকে ৮০০ টাকার ভাড়ার স্থলে ৬৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্টার ক্লাক নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রæপের সভাপতি অসীম দেওয়ান বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেওয়া হয়। এখন ঢাকা থেকে বরিশালে আসার সময় কোনো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ঈদের সময় ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, ঈদের সময় যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেউ ভাড়া বেশি নিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএন
