ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

নলছিটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দখল করে অটোস্ট্যান্ড

নলছিটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দখল করে অটোস্ট্যান্ড
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ঝালকাঠির নলছিটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর দখল করে অবৈধভাবে অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই স্ট্যান্ড দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে শতাধিক অটোবাইক। 

এতে যেমন শব্দ দূষণে সমস্যা সৃষ্টি করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের, তেমনি ভাষার মাসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে হতাশ করছে অবৈধ এ স্ট্যান্ডটি। ভাষার মাসে শহীদদের মর্যাদা রক্ষার জন্য অবৈধ এ স্ট্যান্ডটি অন্যত্র থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

জানা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নলছিটিতে প্রথমে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছোট আকারে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে শহরের কলেজ রোডে বড় আকারে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। 

এটিই এখন নলছিটির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই শহীদ মিনারে প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
অথচ সেই শহীদ মিনারটি এখন অরক্ষিত। নেই সীমানাপ্রাচীর। 

যথাযোগ্য মর্যাদা ও অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে শহীদ মিনার। ২০১৬ সালের দিকে শহীদ মিনার চত্বরে অবৈধভাবে অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়। সেই থেকে শহীদ মিনার চত্বর এখন অটোস্ট্যান্ড নামে পরিচিতি পায়। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহীদ মিনারটি সুরক্ষিত না থাকায় দিনের বেলায় অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির শব্দ দূষণ, চালকদের একে অপরের সঙ্গে বাকবিতন্ডা, মারামারি লেগেই থাকে।

আর রাতের বেলায় নির্জন হওয়ায় বসে মাদকের আড্ডা। অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির চালক ও মাদকসেবীদের মল-মুত্রের গন্ধে শহীদ মিনারের চারপাশে কোন ভদ্র মানুষের যাওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান স্থানীয়রা। 

রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, অরক্ষিত শহীদ মিনার চত্বরে সারি সারি অটোবাইক রাখা। শহীদ মিনারটি ময়লা,আবর্জনা, দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। দেখে বুঝার উপায় নেই এটা উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। 

অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির চালকরা জানান, এ এলাকাটি অত্যান্ত ব্যস্ততম। এখানে অটো রাখার মতো কোনো স্ট্যান্ড নেই। সড়কের ওপারে সিএনজি, ডাইসু, ম্যাজিক গাড়ি পার্ক করলে সড়কে যানজট লেগে যায়। তাই তাঁরা শহীদ মিনার চত্বরে খালি জায়গায় অটোস্ট্যান্ড করেছে। 

শহীদ মিনারে কোন জাতীয় অনুষ্ঠান হলে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেন। তখন অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়িগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

নলছিটি পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম বাহার বলেন, শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নলছিটি শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরার্শে মনোরম পরিবেশে ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। 

কিন্তু নির্মাণের পর সেই শহীদ মিনারটির সুরক্ষা করা হয়নি। অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এ সুযোগে অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি।  তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অটোস্ট্যান্ডটি সুবিধাজনক একটি স্থানে সরিয়ে নিলে সবার জন্য ভালো হয়। 

নলছিটির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তপন দাস বলেন, অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির জন্য শহীদ মিনার চত্বরে স্ট্যান্ড হবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুরোপুরি খামখেয়ালি করে একটি চক্র এই স্ট্যান্ড করে দীর্ঘদিন ধরে টিকে আছে। এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই যদি অটোস্ট্যান্ড সরানো না হয়, তাহলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো। 

নলছিটি পৌরসভার মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, স্থানীয় এমপি মহোদয় ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে শহীদ মিনার চত্বর থেকে অটোস্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। 

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে ইতোমধ্যে পৌরসভার মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বাউন্ডারি ওয়াল (সীমানা প্রাচীর) নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন করতে বলা হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন