ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে এ কেমন আচরণ?

বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে এ কেমন আচরণ?
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বৃদ্ধ বাবাকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের। বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতনের সে ঘটনার ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।  

ভিডিওতে দেখা যায়, বাড়ি থেকে বাবাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে রাস্তায় ফেল দিচ্ছে তার ছেলে। হাত ধরে করছে টানাহেঁচড়া। পিঠ ও ঘাড় ধরে একের পর এক ধাক্কা দেয় ছেলে। গায়ের গেঞ্জিটাও টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলে। এসময় ছেলেকে বলতে শোনা যায়, 'এ মহিষ কের?  মহিষ ব্যাচ্চে কেডা? মহিষের ধারে লইয়া যামু।'

এসময় কয়েকজন নারীও ছিল সেখানে। এদের মধ্যে এক নারীকে বলতে শোনা যায়, 'ফিরোজ ভাই ছাড়েন।' কিন্তু তা শুনছিলে না ছেলে। ধাক্কা দিতে দিতে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবাকে।

জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই বাবার নাম দেলোয়ার ফরাজী (৭০)। আর নির্যাতনকারী ছেলে হলেন ফিরোজ ফরাজী। তাদের বাড়ি দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামে। গত ১৪ জুন সকাল ৮টায় তাদের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাবা দেলোয়ার ফরাজী বাদী হয়ে তিন ছেলে এবং এক পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। বিচারক এ মামলাটি আমলে নিয়ে তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। 

আমলার আসামিরা হলেন নির্যাতনকারী ছেলে ফিরোজ ফরাজী (৩২), আলমাছ ফরাজী (৪৮), আজমল ফরাজী (৪০) ও আলমাছের স্ত্রী চরমোন্তাজ ইউপির ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য নাজমা বেগম (৪০)।    

স্থানীয় লোকজন জানায়, ১৫-১৬ বছর আগে দেলোয়ার ফরাজী তার স্ত্রী রওশনা বেগমের নামে সব জমিজমা লিখে দেন। তিন বছর আগে হারুন ফরাজী নামের এক ছেলেকে বঞ্চিত করে ফিরোজ, আলমাছ ও আজমলের নামে সেই জমি দলিল করে দেন তাদের মা। এ জমিজমা নিয়েই তিন ভাইয়ের সঙ্গে হারুনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ওই ঘটনার আগ থেকেই হারুনের ঘরে বসবাস করত তার বাবা। ফলে অন্য তিন ছেলের সঙ্গে বাবার দূরত্ব বাড়তে থাকে। 

প্রতিবেশীরা বলছেন, ওই দিন মহিষ চোর বলায় বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাণ্ড ঘটায় ছেলে। 

দেলোয়ার ফরাজীর বড় ছেলে আলমাছ ফরাজী বলেন, আমার স্ত্রী মেম্বার। আমার বিরোধী লোকেরা বাবাকে উসকানি দেয়। এ কারণে বাবা পাগলামী করে। বাবাকে মারে নাই, ছোট ভাই শুধু হাত ধরছে।

নির্যাতনের শিকার দেলোয়ার ফরাজী বলেন, হারুনের ঘরে অনেক বছর ধরে আমি থাকি। জমির ঝামেলায় আমার অন্য ছেলেরা তা পছন্দ করে না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ঝামেলা করে। ওই দিন ফিরোজ আমাকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য অনেক মারছে। হাত-পায়ে শরীরে এখনও দাগ আছে। সঙ্গে আরেক ছেলে আজমলও খারাইয়া থাইক্কা কয়, 'হালারপো হালারে পিটা।' পোলা (ছেলে) বউ নাজমা ডাক দিয়ে কয়, 'পরিষদে নিয়ে যান।'

তিনি আরো বলেন, জমিজমা ছাড়া আরও দ্বন্দ্ব আছে। পোলাবউ নাজমার সঙ্গে হারুনের বউও মেম্বারি নির্বাচন করতে চায়। এজন্য আমারে মারপিট করছে। ফাঁড়িতে (চরমোন্তাজ পুলিশ তদন্তকেন্দ্র) গিয়া ন্যায়বিচার পাই নাই। তাই কোর্টে মামলা করছি।

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। থানায়ও মামলা প্রক্রিয়াধীন। আসামি একজন গ্রেপ্তার আছে। নাম পরে জানানো হবে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন