টানা তৃতীয় দিন বিপৎসীমার ওপরে ৮টি নদীর পানি


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি এবং পূর্ণিমার প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এরই মধ্যে বিভাগের ছয় জেলার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ওইসব নদীর তীরবর্তী উপকূলীয় জেলা এবং উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
বিশেষ করে বরিশাল নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে শহরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধিতে বহু ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ফসলি জমিতে পানি উঠে তলিয়ে গেছে। একদিকে বৃষ্টি এবং অন্যদিকে জোয়ারের পানিতে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি বিজ্ঞান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ‘বৃহস্পতিবার সকালে জোয়ারের সময় কীর্তনখোলা নদীর বিপদসীমা ২.১৪ মিটার অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এগের দিন কীর্তনখোলা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তৃতীয় দিনে নদীর পানি কিছুটা কমলেও নগরীর নিম্নাঞ্চল পলাশপুর, বেলতলা, চরমোনাই, কেডিসি বালুরমাঠ এলাকার পানি এখনো নামেনি। এছাড়া নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ড্রেন হয়ে শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি নদীর মধ্যে সর্বোচ্চ পানি বেড়েছে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলাধীন মেঘনা ও সুরমা নদীতে। তজুমুদ্দিন উপজেলায় মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ২.২২ মিটার অতিক্রম করে ১.২৭ মিটার ওপর দিয়ে দিয়ে এবং দৌলতখান পয়েন্টের এই দুই নদীর পানি বিপদসীমা ২.৭৫ মিটার অতিক্রম করে ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই নদীর পানি গত দুইদিনের তুলনায় আরও বেড়েছে।
এছাড়া, বরিশালের হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ নদীর বিপদসীমা ২.৫০ মিটার অতিক্রম করে আগের দিনের থেকে বেড়ে ৪০ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালী নদীর ৩টি পয়েন্ট যথাক্রমে পাথরঘাটায় বিপদসীমা ১.৮৫ মিটার অতিক্রম করে গতকালের থেকে কম ৫৭ সেন্টিমিটার, বেতাগী পয়েন্টের বিপদসীমা ১.৬৮ মিটার অতিক্রম করে ২২ সেন্টিমিটার ও ঝালকাঠী জেলার বিষখালী নদীর বিপদসীমা ১.৪০ মিটার অতিক্রম করে গতকালের থেকে বেশি ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, পিরোজপুরে বলেশ্বর নদীর বিপদসীমা ১.৪৯ মিটার অতিক্রম করে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো ৩৪ সেন্টিমিটার। কঁচা নদীর উমেদপুর পয়েন্টের বিপদসীমা ১.৬৫ মিটার অতিক্রম করে ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালও একই পরিমাণ পানি বৃদ্ধি ছিলো কঁচা নদীর ওই পয়েন্টে।
পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জ উপজেলাধীন বুড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমা ১.৮০ মিটার অতিক্রম করে ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা গতকাল ছিলো ২৫ সেন্টিমিটার। আমতলী উপজেলাধীন বুড়িশ্বর নদীর বিপদসীমা ২.০৭ মিটার অতিক্রম করে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল এ নদীর পানি বেড়েছিল ১৪ সেন্টিমিটার।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘ভরা পূর্ণিমায় নদ-নদীর পানি এমনিতেই স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। তার ওপর কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমতে আরও দুই-একদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে গত তিনদিন ধরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি, আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এএস
