ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news
নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার

ঝালকাঠিতে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে থাকেন কয়েক লাখ বাসিন্দা

ঝালকাঠিতে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে থাকেন কয়েক লাখ বাসিন্দা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। ফলে ঝড়-জলোচ্ছ্বা সের সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতীরের কয়েক লাখ বাসিন্দাদের মাঝে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাধ্য হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে তাদের। 

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের খবর শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালির নদীতীরের কয়েক লাখ বাসিন্দা। এ জেলায় ৬১টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। নদীতীরে দীর্ঘদিন ধরেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা পড়েন নানা বিপাকে। 

দুর্যোগের সময় নদীতীরের চর ভাটারাকান্দা, দেউরি, সরই, মানকি, বড়ইয়াসহ ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার প্রতিটি সাইক্লোন শেল্টারেই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক আশ্রয় নেয়। সাইক্লোন শেল্টাগুলোতে মানুষ আশ্রয় নিতেই হিমশিম খেতে হয়, তারওপর গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।

 র্দীঘদিন ধরে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবি থাকলেও তা পূরণ হয়নি এ জেলায়। এছাড়া নদী ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধের অভাবেও গৃহহারা হচ্ছেন অনেকে। প্রতি বছর কয়েক দফা বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ভাঙনের কবলে পড়তে হচ্ছে সুগন্ধা ও বিষখালি নদী তীরের হাজারো পরিবার। দীর্ঘ ধরে স্থায়ী বাধ না থাকায় পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত ও বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পর্যায়ক্রমে সাইক্লোন শেল্টার নির্মান করা হচ্ছে। এ জেলায় ৬১টি সাইক্লোন শেল্টার থাকলেও দুর্যোগের মূহুর্তে নদীতীরের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ সরকারি কয়েকশ পাকা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সুগন্ধা নদীতে ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মো. মিলন বলেন, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আমরা নদীর তীরের বাসিন্দা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ট্রলার চালাই। ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা পেলেই আমাদের হৃদয় কম্পিত হয়। আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। কিন্তু ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী তীরে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। এতে আমরা আরো আতঙ্কি আছি। 

সুগন্ধা নদীতীরের পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, শুনেছি এবারের বন্যায় অনেক পানি উঠবে। পানি উঠলে আমাদের ঘর তলিয়ে যাবে। মালামাল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের আশেপাশে কোন সাইক্লোন শেল্টার নেই। আছে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সেখানেই আশ্রয় নিবো। তবে মানুষ আশ্রয় নিলেও গবাদি পশু নিয়ে আমরা কোথায় যাবো। 

ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ড. কামরুন্নেছা আজাদ বলেন, উপকূলীয় এ জেলায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার থাকা প্রয়োজন। এখানে মাত্র ৬১টি রয়েছে, যা পর্যাপ্ত নয়। মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের সময় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। আশা করবো সরকারের পক্ষ থেকে ঝালকাঠিতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করে মানুষের কষ্ট লাঘব করবে।

ঝালকাঠি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পান্না বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা আমাদের কর্মীরা মানুষের মাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আমরা মানুষকে ঝড়ের আগেই সাইক্লোন শেল্টারে যেতে পরামর্শ দিচ্ছি। অনেক যায়, অনেকে আবার যায় না। তবে ঝালকাঠিতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার প্রয়োজন। মানসম্মত সাইক্লোন শেল্টার থাকলে মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে। 

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই, তবে পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমরা সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি ৩৬৬টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। এতে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে সোলার প্যানেল রয়েছে। কয়েকটি নষ্ট ছিল, এগুলো সারানো হয়েছে। আগামীতে সাইক্লোন শেল্টার যাতে বেশি নির্মাণ করা যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হবে। 
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন