মায়ের মরদেহ পোড়ানোর যন্ত্রণা ভুলতে ছেলের ইসলাম গ্রহণ


যে মায়ের গর্ভে জন্ম, মৃত্যুর পর সেই মায়ের মুখে আগুন দেওয়ার রেওয়াজ মেনে নিতে না পেরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন এক যুবক। আদালত ও স্থানীয় এক ইমামের মাধ্যমে সনাতন ধর্ম ত্যাগ ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নে।
ওই যুবকের নাম প্রদীপ কুমার কর। পিতা পরিমল চন্দ্র কর এবং মাতা কল্যানীর রাণী কর। রোববার (৬ জুন) বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এফিডেভিট দেন তিনি এবং জোহরের নামাজের পর তাকে পবিত্র কলেমা পড়িয়ে মুসলমান ধর্মে দিক্ষিত করা হয় বলে নিশ্চিত করেন বরিশাল নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ড দরগাহ্ বাড়ি এলাকাধীন আঞ্জুমান জাহাঁগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া ট্রাস্টের প্রধান এবং আরজ আলী খান কমপ্লেক্স জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।
গোলাম রাব্বানী বলেন, কয়েকদিন ধরেই ওই যুবক আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে যোগাযোগ করেন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। আমি তখন বলেছি, আগে আদালতে এফিডেভিট দিতে হবে। তিনি রোববার (৬ জুন) এফিডেফিট দিলে জোহরের নামাজের পর তাকে পবিত্র কলেমা পড়িয়ে মুসলমান করা হয়। বর্তমানে তার নাম, আবদুল্লাহ আজিজ। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর থেকেই তিনি আমাদের ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানে থাকছেন। আমরা তার খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
জাহাঁগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া মৃধা বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আহম্মেদে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহনের পর তাকে আমি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় শেখাচ্ছি।
ইসলাম ধর্ম গ্রহনকারী আবদুল্লাহ আজিজ বলেন, চার বছর আগে আমার মা মারা যান। হিন্দু ধর্ম মতে মায়ের মৃত্যুর পরে মুখাগ্নি করতে হয় বড় ছেলের। আমার মায়ের মৃত্যুর পরও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। যে মা আমাকে ভূমিষ্ঠ করেছেন তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছি এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেই এই রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। পরে জানলাম ইসলাম ধর্মে মা মারা গেলে তাকে পুড়িয়ে ফেলে না, তাকে সম্মানের সাথে দাফন করেন। এই সম্মানের স্থান থেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হই।
আব্দুল আজিজ বলেন, চার বছর আগেই ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হওয়ার সিদ্ধান্তে নেই। অনেক মুসল্লীর সাথে আলাপ করেছি। কিন্তু কেউ সাহস করেনি। শেষে চার বছরের চেষ্টায় এখানকার কতিপয় মুসল্লীদের বিষয়টি বুঝাতে পেরে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।
তিনি আরো জানান, তার পিতা বর্তমানে বাড়িতে আছেন। আর ছোট ভাই চট্টগ্রামে বসুন্ধরা গ্রুপের একটি কোম্পানীতে চাকরী করেন। আমি যত দিন বাঁচবো ততদিন ইসলাম ধর্ম নিয়েই থাকবো বলে আশ্বস্ত করেন ধর্মান্তরিত এই যুবক।
এমবি
