আ. লীগ-বিএনপি নেতার দখলে সরকারি খাল!


পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নে একটি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এতে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি হয়ে আছে শত শত একর কৃষি জমি।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নে একসময়ের খরস্রোতা ‘হারির খাল’। স্থানীয়দের কারও কারও কাছে যার নাম 'সোহরাবের খাল' হিসেবে পরিচিত। এটি উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের চরবগলা ও জাহাজমারা এলাকায় অবস্থিত।
জানা গেছে, খালটির আয়তন ২৯ দশমিক পাঁচ একর। সেই খালের মূল শাখা ও উপশাখা (নালা) দখল করে অবৈধ বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এর দায় তিন প্রতাপশালীর। এদের দুজন আওয়ামী লীগের, একজন বিএনপির।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে মৌডুবি ৬নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল মোল্লা এবং আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যুক্ত লিখন মিয়া শুরুতে খালটির দুই প্রান্তের উপশাখায় দুজন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।
এরপর গতবছর মাছ চাষের জন্য মৌডুবি ৬নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ মোল্লা মূল খালেই বাঁধ দিয়ে দেয়। এনিয়ে ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয় কৃষকরা। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দাখিল করেন বিক্ষুব্ধরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খালটির তিনটি শাখা বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম পাশের উত্তরের অংশে ফরহাদ মোল্লা, দক্ষিণ অংশে নজরুল মোল্লা ও পূর্বপাশের উত্তর অংশে লিখন মিয়া বাঁধ দিয়ে ঘের করে গলদা চিংড়ি, রুই কাতলা, মৃগেলসহ দেশী প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। ফলে পলি পরে ভরাট হয়ে দিনদিন ছোট হয়ে যাচ্ছে খালের আয়তন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ফরহাদ মোল্লা মূল খালে বাঁধ দিয়ে ঘের করেছে। আমরা তখনই তাকে বাঁধা দিয়েছিলাম। কিন্তু সে তা না শুনে ঘের করেছে। এরআগে, নজরুল মোল্লাও ঘের করছে। যার কারণে ওইসব ঘের সংলগ্ন কৃষি জমিতে এখন চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং লবণ পানি ঢুকানো হয়।’
স্থানীয় কৃষকরা জানান, খালে বাঁধ দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় চাষাবাদ হচ্ছে না। জনস্বার্থে খালটি দখলমুক্ত করে পুনরায় উন্মুক্ত করা প্রয়োজন।
অভিযুক্ত একাংশের খাল দখলদার মো. ফরহাদ মোল্লা বলেন, ‘জাহাজমারা সবাই সরকারি খাল আটকাইয়া (আটকে) মাছ চাষ করে। সেই সুবাদে আমিও করছি। কেউ কেউ ১৫-২০ বছর, আমি এক বছর হইছে করছি। আমি যখন প্রথম করেছি তখন কেউ নিষেধ করে নাই। এ বছর প্রশাসক নিষেধ করছে, আমি মাছ চাষ করি নাই। নজরুল মোল্লা দীর্ঘ বছর ধরে ঘের করে মাছ চাষ করছে।’
আরেক অংশের দখলদার লিখন মিয়া বলেন, ‘আমার ঘেরটিতে রেকর্ডি জমির অংশ আছে। এভাবে তো সবাই ঘের করে রাখছে যার যার মত করে। ফরহাদ বাঁধ দিয়ে আমাদের সকলের সমস্যা করতেছে। তার বাঁধটি উন্মুক্ত খালে। এ কাজটি করেছে সম্পূর্ণ খামখেয়ালিভাবে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
তবে অপর খাল দখলদার নজরুল মোল্লার মোবাইলে বৃহস্পতিবার দুপুরে একাধিকবার কল করলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন-২০২০ অনুযায়ী দেশের সব নদ-নদী, জলাধার, খাল-বিল, সমুদ্র, উপকূল, হাওড়, বাওড়, জলাভূমি, ঝরনা, হ্রাদ, অন্যান্য পানির উৎসে দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবে মোবাইল কোর্ট।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও মৌডুবি ইউনিয়নের প্রশাসক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার বিষয়ে ফরহাদ মোল্লার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ আসেনি। তিনি আরো বলেন, ‘অবৈধভাবে খাল দখল করায় আশপাশের জমিতে চাষবাসে বিপর্যয় হচ্ছে। তাই আমরা শিগগরই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বাঁধ কেটে দিব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, জনস্বার্থে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এইচকেআর
