ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Motobad news

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স স্বপ্নের ফাইনাল

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স স্বপ্নের ফাইনাল
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মরক্কো রূপকথা থামল অবশেষে। ফরাসি সৌরভই ছড়িয়ে গেল কাতারে। তাতে নতুনের ওপর জয় হলো অভিজ্ঞতার। আফ্রিকান দেশটির ঐতিহাসিক পথচলা ২-০ গোলে থামিয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স নাম লেখাল ফাইনালে। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা নামবে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে। সেই লক্ষ্যের কেন্দ্রটা দুই দলের জন্যই সমান। দুই দলের সামনেই তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। সে রাতে ফুটবলের বর্তমান কিংবদন্তি লিওনেল মেসির মুখোমুখি হচ্ছে আগামীর তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। উপভোগ্য সেই লড়াইয়ে চোখ জুড়াতে অপেক্ষায় সারা বিশ্ব।

বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কোর পক্ষে ছিল আর্জেন্টিনা। আসলে ফাইনালে অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পেতেই এই গলা ফাটানো। আল বায়াত স্টেডিয়ামেও দেখা গেছে আকাশি-সাদার সমর্থকদের উপস্থিতি। ফাইনালে ফ্রান্সকে এড়াতে তারা চেয়েছিল আফ্রিকান দেশটিকে। তবে তাদের চাওয়া পূরণ হয়নি। বরং অঘটনের শঙ্কাকে উড়িয়ে ফ্রান্স ম্যাচটা জিতেছে। শুরুতেই ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে থিও ফার্নান্দেজের গোলে লিড নেওয়া, এরপর অবশ্য মরক্কো আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিয়েও ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে ফরাসিদের গোলের দরজা খুলতে পারেনি। উল্টো সুযোগ সন্ধানী গোলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্সের বিশ্বকাপ ফাইনাল নিশ্চিত করেন বদলি ফরোয়ার্ড কোলো মানি। ফাইনালের স্বপ্নের সমাধি ঘটলেও আফ্রিকা ও আরবের প্রতিনিধিত্ব করা মরক্কোর বিদায়টা হয়েছে মাথা উঁচু করে।

মরুর বিশ্বকাপে ফেভারিটদের কাতারে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স ছিল ওপরের দিকে। চোটের কারণে করিম বেনজেমা, পল পগবা, এনগোলো কন্তে, ক্রিস্টোফার এনকুকুর মতো তারকাদের ছাড়া ফ্রান্সকে নিয়ে অবশ্য একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে এ দলে আছেন এমবাপ্পের মতো গোলমেশিন। আরও আছেন অলিভিয়ে জিরু, আন্তোইন গ্রিজমান, উসমান দেম্বেলের মতো  ভয়ংকর সব ফরোয়ার্ড। সব শঙ্কা তাই শুরুতেই উড়িয়ে ফ্রান্স রাজার মতো এগিয়েছে। মাঝখানে তিউনিসিয়ায় হোঁচট খেলেও নকআউট পর্বে ফ্রান্সকে সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি পোল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড। এমবাপ্পে আর জিরু গোলের কাজটা ঠিকঠাক পালন করে গেছেন। তবে সেমিফাইনালে পুঁচকে মরক্কো কাল ভালোই পরীক্ষা নিয়েছিল। উত্তর আফ্রিকার দেশটি স্পেন, পর্তুগালের মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের বিদায় করে আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেমেছিল খেলতে। হৃদয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ের বীজ বুনে মাঠে নামা হাকিম জিয়েচ, আশরাফ হাকিমি, এন-নেসেরিরা হয়তো পারেননি ফরাসি দুর্গ ভেঙে দিতে। তবে তাদের লড়াকু মানসিকতা মনে দাগ কেটেছে ফুটবলপ্রেমীদের।  

মরক্কো সেমিতে নেমেছিল আগের পাঁচ ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করে। সেটিও ছিল আত্মঘাতী গোল। তবে এই ম্যাচে পঞ্চম মিনিটেই পিছিয়ে পড়তে হয়। গ্রিজমানের কাছ থেকে বল পেয়ে এমবাপ্পের দু’বারের প্রচেষ্টা ডিফেন্সে বাধাপ্রাপ্ত হলেও চলে যায় বাঁদিকে ফাঁকায় থাকা থিও হার্নান্দেজের কাছে। অনেকটা লাফিয়ে ওঠা বলটা দারুণ ভলিতে জালে জমা দেন ফরাসি ডিফেন্ডার। লিড নিয়ে কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে ফ্রান্স। তাতেই মরক্কো পায় চেপে ধরার সুযোগ। ১০ মিনিটে আজ্জে দিন ওনাহির দূরপাল্লার শট হুগো লরিস বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে রুখে না দিলে ম্যাচে ফিরতে পারত মরক্কো। আগের পাঁচ ম্যাচে চার গোল করা জিরু প্রথমার্ধে দুটি ভালো সুযোগ থেকে গোল করতে পারেননি। তাতে অস্বস্তিটা সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল ফ্রান্সের। ৪৫ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সেরা সুযোগ নষ্ট হয় মরক্কোর। হাকিম জিয়েচের কর্নারে ডিফেন্ডার জাওয়াদ এল ইয়ামিকের বাইসাইকেল কিক সাইড পোস্টে লেগে ফিরলে হতাশ হতে হয় অ্যাটলাস লায়নদের। যোগ করা সময়ে হাকিম জিয়েচ দুটি কর্নার আদায় করে ভীতি ছড়িয়েছিলেন ফরাসি রক্ষণে। তবে তা থেকে গোল পায়নি দলটি। বিরতি থেকে ফিরে ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের দল ডান দিক ধরে বারবার আক্রমণে উঠেছে। সামনে জিয়েচ ও পেছন থেকে আশরাফ হাকিমি ও ওনাহি বারবার ভীতি ছড়াতে থাকেন। এ সময়টায় ফ্রান্সকে বড্ড দিশেহারা মনে হচ্ছিল। ৫৪ মিনিটে দুই সেন্টারব্যাক রাফায়েল ভারানে ও ইব্রাহিমা কোনাতে ফ্রান্সকে রক্ষা করে অসাধারণ দুই ক্লিয়ারেন্সে। মরক্কোর ক্রমাগত আক্রমণের ফাঁকেই অবশ্য কাজের কাজটা করেন কোলো মানি। ৭৯ মিনিটে উসমান দেম্বেলের জায়গায় মাঠে এসেই করেন সুযোগ সন্ধানী গোল। মার্কাস থুরামের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে দ্রুত বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন এমবাপ্পে। এক ডিফেন্ডারে বাধা পেয়ে বল চলে যায় ডান দিকে ফাঁকায় থাকা মানির কাছে। আলতো টোকায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম গোল করেন মানি।


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন