ক্ষমতায় থাকতে ‘জঙ্গি নাটক’ মঞ্চস্থ করছে সরকার: মির্জা ফখরুল


মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার ও গুম-খুন করেও চলমান আন্দোলনকে দমাতে ব্যর্থ হয়ে নতুন কৌশল হিসেবে ‘জঙ্গি নাটক’ মঞ্চায়নের চেষ্টা করছে সরকার—এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব কোনো নাটক করেই আন্দোলন দমন করা যাবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ও হুঁশিয়ারি দেন। গত রোববার আদালতপাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার উল্লেখ করে সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা গুলি করে নয়নকে হত্যা করতে পারেন, শাওনকে হত্যা করতে পারেন। আর যখন আদালতে জঙ্গি উধাও হয়ে যায়, তখন আপনারা কিছুই করতে পারেন না। এই ঘটনায় জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে—আবার সেই জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে যাতে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার আরও কিছুটা সময় পায়। আমরা বিশ্বাস করি এসব অশুভ চক্রান্ত থেকে সরকার সরে দাঁড়াবে।’
বিএনপির চলমান আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সরকার গোটা দেশে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সমাবেশগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে না পারে, জনসমাগম যেন কম হয়, সে জন্য সারা দেশে মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিনা কারণে দিনে-রাতে নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে। বিগত গণসমাবেশগুলোকে কেন্দ্র করে একই কাজ করা হয়েছে। সামনে যে সমাবেশগুলো হবে, সেগুলো ব্যাহত করতেও ইতিমধ্যেই বিভাগগুলোর জেলা, থানা ও ইউনিয়নে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী সমস্যা তৈরি করছে।’
সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে দিন-দিন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ছে। জনগণ যখন সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে শুরু করেছে, তখন সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষদের পুরোনো কায়দায় হয়রানি করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই—এইভাবে ভয় দেখিয়ে, হামলা করে, খুন করে, গুম করে জনগণের মুক্তির আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না। জনগণ এখন জেগে উঠেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দানবীয় সরকারের পতন অবশ্যই ঘটাবে।’
মির্জা ফখরুল জানান, ২২ আগস্ট থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি নেতা কর্মীদের নামে ৯৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৪ হাজার ৪১২ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে, ১০ হাজার ৬৬৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে এবং ৪৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার কৌশল হিসেবে ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরের উত্তরে একটি মামলায় ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহানগর দক্ষিণে ২৪৫ জনের নামে তিনটি মামলা করা হয়েছে। ঢাকা জেলার সাভারে ৩২ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। বাড়িতে-বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আমাদের নেতারা এখন আর রাতে বাসায় থাকতে পারছেন না। বাসায় থাকলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করে তীব্র নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে এমনিতেই মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনকে দুঃসহ করে তোলা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম না কমালে জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এইচকেআর
