নয়াপল্টনের বিকল্পও ভেবেছে বিএনপি !


যে কোনো মূল্যে নয়াপল্টনে বা মহানগরের কেন্দ্রবিন্দুতেই ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করতে অনড় থাকবে বিএনপি। নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আরামবাগ মোড়ে সমাবেশের অনুমতি চাইবে দলটি। অবশ্য বিকল্প তিন জায়গায় অনুমতির বিষয়ে সন্দিহান দলটির সিনিয়র নেতারা। তাই শেষ মুহূর্তে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে নেতারা বলছেন, অতীতেও এখানে বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের মহাসমাবেশ হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওইসব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবারও তাঁরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চান। কোনো অবস্থায় রাজধানীর বাইরে মহাসমাবেশ করতে রাজি হবেন না তাঁরা।
বিএনপি নেতাদের শঙ্কা, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগরের এক পাশে কিংবা বাইরে পূর্বাচলের মতো দূরবর্তী স্থানে সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। ওইসব স্থানে ক্ষমতাসীন দলের হামলা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। নয়াপল্টনে সমাবেশ হলে নেতাকর্মীর শৃঙ্খলা, নিরাপত্তাসহ সবকিছু তাঁদের অনুকূলে থাকবে। সব কিছু বিবেচনা করে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের স্থানটি বিএনপির হাইকমান্ডের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি পেতে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলটির একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে নয়াপল্টনের বিকল্প কোনো জায়গা ভাবার ব্যাপারে বলা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশের স্থান দেখার জন্য বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আরামবাগ তিন রাস্তার মোড়সহ আরও কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখেন। বিকল্প হিসেবে ওই তিনটি স্থানকে কিছুটা উপযুক্ত মনে করছেন তাঁরা। স্থানগুলো নিয়ে দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠক করে দু-একদিনের মধ্যে প্রশাসনকে বিকল্প পছন্দের তালিকা দেবেন দলটির নেতারা।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, তাঁরা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে নয়াপল্টন ছাড়াও ওই তিনটি স্থানকে উপযুক্ত মনে করেছেন। ওইসব জায়গার অনুমতি না দিলে তাঁদের প্রথম পছন্দ মহানগরের কেন্দ্রবিন্দু নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবেন তাঁরা। তাঁদের অন্যান্য গণসমাবেশের স্থানও বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে হয়েছে। ওই দিন শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় জনজীবনে ভোগান্তিও কম হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি আমরা। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছি। সরকারি দল যেভাবে ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করছে, তাতে নয়াপল্টনে সমাবেশ করলে সরকারি দল তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না।
বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, জনইস্যুতে তাঁরা অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতোই ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করতে চান। তবে সরকার ভীত হয়ে অহেতুক উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। কিন্তু যতই চেষ্টা করুক, তাঁরা মহাসমাবেশকে সফল করতে বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে বাধা দিয়েও কোনো লাভ হবে না। গণপরিবহন বন্ধ করে, পথে পথে বাধা সৃষ্টি করে জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না। বরং এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, যা সরকার সামাল দিতে পারবে না।
অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, এটি তো একটি সমাবেশ। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা, মন্ত্রীরা বিভিন্নভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। অথচ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে মনে হয় যে, সামনে একটি যুদ্ধ হবে। ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি :
মহাসমাবেশকে সফল করতে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশের ওয়ার্মআপ হিসেবে নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে পৃথক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তৃণমূলকে চাঙ্গা রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ছুটছেন বিএনপিসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রথম দফার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির প্রস্তুতি সভা শেষ করা হয়েছে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতেও চলছে প্রস্তুতি সভা। এসব সভায় যে কোনো মূল্যে মহাসমাবেশকে সফল করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে হলেও সমাবেশে উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে। মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সম্প্রতি তিনি ঢাকার নেতাদের নিয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি করেছেন। একই সঙ্গে ঢাকার ১১টি ইউনিট ও আশপাশের এলাকায় জোনভিত্তিক কর্মিসভা চলছে। শুধু ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো নয়, মহাসমাবেশকে টার্গেট করে সারাদেশের নেতাকর্মীর একটি বড় অংশের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। অবশ্য ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীকে ধরপাকড় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এরই মধ্যে সারাদেশে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে হামলা করা হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে।
উত্তেজনার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে। তারা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে এই ভয় কাজ করছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার ভয় পেয়ে দেশজুড়ে আবারও গ্রেপ্তার শুরু করেছে। তবে কোনো কিছুই তাঁদের ঠেকাতে পারবে না।
এএজে
