ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Motobad news

শরতের অপার সৌন্দর্য শুভ্র কাশফুল

শরতের অপার সৌন্দর্য শুভ্র কাশফুল
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ষড়ঋতুর বাংলায় বর্ষাকালকে বিদায় জানাতে শুভ্রতার প্রতীক হয়ে ফিরে আসে শরৎকাল। শরৎ এলে বাংলার প্রকৃতি কাশফুলের সাদা-সবুজের সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়। বাঙালির হৃদয়ে আনন্দের আশা জাগে। শিশিরভেজা মাঠজুড়ে সবুজ ঘাস, নীল আকাশ ও সাদা কাশফুল শিহরণ জাগায় হৃদয়ে।


জানা যায়, ভারত, নেপাল, ভুটান, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশেও কাশফুল ফোটে। আমাদের দেশে তিন প্রজাতির কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। 

কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। শরীরে ব্যথানাশক হিসেবে ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশফুল গাছের মূল ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই আদি যুগ থেকে। কাশমূল বেটে গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশফুল গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে ওষুধ তৈরি করে তা নিয়মিত পান করলে পাথর দূর হয়।

বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুল নিয়ে কবিতা, গান, গল্পই বলে দেয় দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যই ঋতু রানী শরতের অন্যতম আকর্ষণ৷ শরতের কাশফুল নিয়ে কবিগুরু লিখেছেন- ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা। নবীন ধানের মঞ্জুরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা'। কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন- 'কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি।'


আমতলীতে  বিনোদনের কোন  যায়গা  না থাকায  প্রকৃতিতে চলমান শরতে নদ-নদী ও চরাঞ্চলের বিস্তীণ কাশবনই এখন প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একমাত্র বিনোদন স্থল। পায়রানদীর  কোল ঘেষা উপকূলীয় আমতলীর সড়কের মহাসড়ক পেট্রোল পাম্প এলাকাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর র্তীরবর্তী মাঠ জুড়ে এখন দোদুল্যমান সাদা কাশফুলের সমাহার। 

কাশফুলের শুভ্রতায় মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এই এলাকা এখন বরগুনার দিয়া বাড়ি নামেই পরিচিত।


প্রতিদিনই কাশবন এলাকায় দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও অনেকেই দূর দুরান্ত  থেকে ছুঁটে আসেন একটু প্রমান্তির  আশায় স্বপ্নের কাশফুলের রাজ্যে। বিকেল গড়াতেই এখানে দেখা যায় দলবেঁধে তরণ-তরুণীরা আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আপন মনে গান গেয়ে, কেউ কবিতা পড়ে, কেউ ভিডিও কিংবা সেল্ফি তুলে মজা করতে করতে সময় পাড় করছেন। অনেকে আবার কেক কেটে জন্মদিনের উৎসব করছেন। পরিবারের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দ উচ্ছাসে সাদা কাশফুলগুলো সংগ্রহ করছে। 


কাশবনে ঘুরতে এসেছেন আমতলী কলেজের ছাত্র  সাইদুল ঠুংকু  বলেন, কাশবনে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রকৃতি সবসময়ই এমন শুভ্র থাকুক। বাতাসের চঞ্চলতায় আমরা মুগ্ধ। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই।

ঘলদিয়া থেকে ঘুরতে আসা সাকিব  বলেন, সুন্দর একটি কাশবন পেয়েছি। সত্যিই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। 

শিক্ষার্থী নাজনিন  সুমা  বলেন, বাঙালি নারী কাছে সব থেকে আনন্দ হলো শাড়ি পড়ে শরতের সাজে প্রিয় মানুষের সাথে কাশবনে ঘোরাঘুরি করা। এজন্যই যুগ যুগ ধরে কবি সাহিত্যিকরা নারীকে তাদের গল্প-কবিতায় এবং নারী নিজেই নিজেকে শরতের শুভ্রতায় সাজিয়ে তুলতে চেয়েছেন তার প্রিয় মানুষের কাছে।

পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা মাসুমা বলেন, স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসে এখানকার বিস্তৃর্ন কাশবন দেখে সত্যি হৃদয় জুড়িয়ে গেছে। তবে যেভাবে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে কর্তৃপক্ষের উচিৎ এখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

আমতলীর সরকারী কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক মো.  আবুল হোসেন বিশ্বাস বলেন,  কাশফুলের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান হচ্ছে নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটিতে খুব সহজেই কাশফুল গাছ বেড়ে ওঠে। আমাদের দেশের চরাঞ্চলে চাষিরা একসময় বাণিজ্যিকভাবেও কাশফুল চাষ করতো। যা এখন বিলীনের পথে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন