চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ


বরগুনার বামনা উপজেলার ৭নং বড়তালেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে চুরির অপবাদ দিয়ে চোখ বেঁধে ক্লাস রুমে আটকিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও দপ্তরীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. সিয়াম (১০)। সে বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের বড়তালেশ্বর গ্রামের মো. বাবুল মেকারের ছেলে।
মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীর চাচা মো. আব্দুল কুদ্দুস এমন নির্মম নির্যাতনের বিচার চেয়ে বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বরাবরে তিনজনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন- ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মোসা. তানজিলা, প্রধান শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও বিদ্যালয়টির দপ্তরী মো. নিজাম উদ্দিন।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মানিব্যাগ চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই মানিব্যাগটি নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর স্কুল ব্যাগে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা. তানজিলা ওই শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে আটকে রাখে। পরে একটি গামছা দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর চোখ বেঁধে তাকে বেত দিয়ে অমানুষিক ভাবে পিটায় সহকারী শিক্ষিকা তানজিলা ও দপ্তরী নিজাম উদ্দিন।
ঘটনাটি শুনে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কর্মকার এসে তাদের নির্যাতন বন্ধ না করে উল্টো তিনিও মারধর শুরু করেন। শিক্ষকদের বেত্রাঘাতে ওই শিক্ষার্থীর নিতম্ব ও পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে পরিবারের লোকজন স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সিয়াম সাংবাদিকদের বলেন, ৪র্থ শ্রেণির এক ছাত্রের একটি মানিব্যাগ ৫ম শ্রেণির আর এক ছাত্রের কাছে গচ্ছিত রাখতে দেয়। এ বিষয়টি ক্লাসের সবাই জানতো। ওই মানিব্যাগটি আমি দুপুরে বাড়িতে ভাত খেতে যাওয়ার ফাঁকে আমাকে ফাঁসানের জন্য কেউ আমার স্কুল ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। আমি জানতাম না আমার ব্যাগে ওই চুরি যাওয়া মানিব্যাগ রয়েছে। পরে স্যারেরা আমার ব্যাগে ওই মানিব্যাগটি পায়। এজন্য আমাকে তানজিলা আপায় ও নিজাম ভাই রুম আটকিয়ে চোখ বেঁধে বেত দিয়ে অনেক সময় পিটায়। এতে আমার নিতম্বে বড় বড় কালো দাগ হয়ে যায়। ব্যথায় এখনো আমি বসতে পারি না। বিশ্বাস করেন আমি মানিব্যাগ আমার ব্যাগে রাখিনি। আমি চুরি করিনি।
শিক্ষার্থীর পিতা মো. বাবুল মেকার বলেন, আমি অনেক দিন ধরে অসুস্থ হয়ে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ছেলের ওপর এমন নির্যাতনের খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছি। আমার ছেলে ব্যথায় এখনো বসতে পারে না। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও বিষয়টি জানালেও তারা এমন নির্যাতনের কোনো প্রকার বিচার করেনি কিংবা বিচারের উদ্যোগ নেয়নি। শেষ ভরসা হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কর্মকারকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি প্রথমে ফোনটি রিসিভ করেন নি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। প্রধান অভিযুক্ত ওই সহকারী শিক্ষিকা মোসা. তানজিলা আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর মানিব্যাগ সহ ১৬শত টাকা চুরি হয়। আমি ৫ম শ্রেণির সকল ছাত্রকে বলি টাকা নিয়ে থাকলে ফেরত দিতে। পরে ওই ছাত্র নিজে মানিব্যাগটি ফেরত দেয়। পরে প্রধান শিক্ষক স্যার তার পিতাকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি স্কুলে তার ছেলের বিচার করতে বলেন। তবে তাকে আমি কিংবা স্কুলের কেউ মারধর করেনি। আমার বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করছে।
বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, আমার কাছে ওই ছেলে ও তার বাবা অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। আমি নিজে অমানুষিক নির্যাতনের ক্ষত দেখেছি। এভাবে কোনো শিক্ষক ছাত্রকে পেটাতে পারে না। আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ৭ দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
এএজে
