চলে গেছে ইয়াস, রেখে গেছে গভীর ক্ষত


বরিশালসহ দখিনের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও পূর্ণিমা’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রভাহিত হওয়ায় জেলা-উপজেলার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পানি।
প্লাবিত হয় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর বাড়ি, ডুবে গেছে মাঝের ঘের ও পুকুর। সব হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে দুর্ভোগে আছেন উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে এ অঞ্চলের মোট ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭২৪ জন মানুষ। এর মধ্যে ভোলা জেলায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৬০ জন, পটুয়াখালীতে ৫ লাখ, বরগুনায় ১৭ হাজার ৩২০ জন, ঝালকাঠীতে ১ লাখ ৪৯ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৬২ জন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৬ জেলায় ভেড়িবাঁধ ভেঙেছে মোট ৩৮ হাজার ৬১০ মিটার। এর মধ্যে ভোলায় ৪০ মিটার, পটুয়াখালীতে ১৫ হাজার ৫২০ মিটার, বরগুনায় ১৭ হাজার মিটার, পিরোজপুরে ৩০০ মিটার, ঝালকাঠীতে ৫ হাজার ৪৫০ মিটার এবং বরিশালে ৩০০ মিটার। বাঁধ ধ্বসে গেছে।
এছাড়া ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজার ৯৪২টি। যার মধ্যে ভোলায় ১১ হাজার ৩০৯টি, পটুয়াখালীতে ৪ হাজার ৬৯৩টি, বরগুনায় এক হাজার ৮০০ এবং বরিশাল জেলায় এক হাজার ১৪০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জেলা প্রশাসক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে ‘ইয়াস’ এবং জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য খাতে। এ খাতে বিভাগে ৮২ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২ হাজার ৮৬১ হেক্টর আয়তনের ১৭ হাজার ২০৯টি ঘের ও পুকুরের ২ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে পটুয়াখালীতে।
ভোলায় ৩৭৩ হেক্টর আয়তনের ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, পিরোজপুরে ৫৯৬ হেক্টর আয়তনের ৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা, বরিশালে ৪০০ হেক্টর আয়তনের ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, বরগুনায় ৭৩ দশমিক ৯৬ হেক্টর আয়তনের ১ কোটি ২ লাখ টাকা এবং ঝালকাঠী জেলায় ২০১ দশমিক ৪৯ হেক্টর আয়তনের ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক তৌফিক এলাহী চেীধুরী মতবাদকে জানিয়েছেন, ‘ভোলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৬০ জন মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩০৯টি, এর মধ্যে আশিংক বিধ্বস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৩০টি ঘর এবং সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৯টি ঘর। ইয়াসের প্রভাবে ভোলার ২৩টি দুর্গম এলাকায় ৬৮ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। প্রবল জোয়ারের চাপে জেলার ১৫টি পয়েন্টে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেঙে গেছে বাঁধের ৪০ মিটার। সাগর উপকূলের দ্বীপচর চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও মনপুরা উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশী।
জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন মতবাদকে জানান, দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার , শুকনা খাবার ও থাকা খাওয়ার জন্য বরাদ্ধা দেয়া হয়েছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। চরফ্যাসন উপজেলায় দেয়া হয়েছে ২০ মেট্রিক টন চাল। প্রতি উপজেলায় ১ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য ও ১ লক্ষ টাকার গো-খাদ্যের জন্য সাতটি উপজেলায় মোট ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এখনো মজুদ আছে ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ১ হাজার ৮ শত টাকা।
পটুয়াখালী জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার সরকার মতবাদকে বলেন, ‘এ জেলায় এখন পর্যন্ত ৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা খোঁজ পেয়েছে। এখানে বাড়ি-ঘড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৩ টি। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে ১৫ হাজার ৫২০ মিটার, গ্রাম প্লাবিত হয়েছে ২৩২টি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান মতবাদকে জানান, এ জেলার এক হাজার ৮০০ কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৩২০ জন মানুষ। বাঁধ ভেঙে গেছে ১৭ হাজার মিটার। এছাড়া এক হাজার ৩০০ হেক্টর ফসল ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের মাছের ঘের ও পুকুর জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন মতবাদকে জানান, এ জেলায় ৩০ হাজার ঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ঘর। ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে ৩১টি ইউনিয়নে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এ জেলার ৭টি উপজেলায় আবাদকৃত ১৬৭ হেক্টর আউষ ধানের বীজতলা, ৭ হাজার ৩১৮ হেক্টর আবাদী জমি, ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত, ১৪১ হেক্টর জমির পানের বরজসহ ২১২ হেক্টর রবি শষ্যের ক্ষেত সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ঝালকাঠী জেলা প্রশাসক জোহর আলী জানান, বিভিন্ন উপজেলায় ঘর-বাড়ি, বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আশ্রাফুল হক জানিয়েছেন, ‘ঝালকাঠিতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৯ হাজার। জোয়ারের পানির চাপে ৫ হাজার ৪৫০ মিটার বাঁধ ধ্বসে গেছে। এছাড়া ২ হাজার ৪৮০টি মৎস্য ঘের এবং এক হাজার ১৯০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রয় জানিয়েছেন, ‘ ইয়াসের প্রভাবে বরিশালের ১০টি উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৬২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদের এক হাজার ১৪০টি কাঁচা ঘর-বাড়ি বেঙে গেছে। বিশেষ করে বিভাগের চারটি উপজেলায় বেড়িবাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি মাছের ঘের, ইরি ধান ও পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। চারটি উপজেলার মধ্যে হিজলায় ৩০০ মিটার বাঁধ ধ্বসে গেছে। বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে জোয়ারের প্রভাবে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাঁচটি ঘর জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জয়নগর, দরিচর-খাজুরিয়া, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নে বাঁধ, রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার হাট কমিউনিটি ক্লিনিকটি। বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের বেড়িব
এমইউআর
