দক্ষ জনবলের অভাবে ভুগছে নলছিটি পৌরসভা


১৮৬৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় নলছিটি পৌরসভা। দ্বিতীয় শ্রেণির এ পৌরসভা এখন অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর। ভালো কোন রাস্তাঘাট এ পৌরসভায় নেই। এরই মধ্যে বর্তমানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে বড় একটি প্রকল্প এ পৌরসভায় চলমান আছে। কিন্তু এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোন দক্ষ জনবল পৌরসভায় নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে নলছিটি পৌরসভার বাসিন্দা মো. আল আমিন এডিবির প্রেসিডেন্ট ও কান্টি ডিরেক্টরের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে জানা যায়, হিসাব শাখায় কোন দক্ষ হিসাবরক্ষক নেই। নামকাওয়ান্তে একজন ক্যাশিয়ার দিয়ে হিসাব শাখা পরিচালিত হয়। ক্যাশিয়ার চেকে মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের সময় ধরা পরলে ওই মামলায় তিনি প্রায় তিন মাস জেল খেটেছেন। বর্তমানে মামলাটি দুদকে চলমান আছে। এখানকার বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিবাজ।
বর্তমান পরিষদের কাউন্সিলরদের অত্যাচারে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী শারীরিকভাবে লাঞ্চিতও হয়েছেন। যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরে বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। এ পৌরসভার কর আদায়কারী মো. গোলাম মোস্তফা এবং জামাল সাময়িক বরখাস্ত আছে। কোন পৌর ট্যাক্স আদায় না করে বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতিতে জর্জরিত। যার ফলশ্রুতিতে ট্যাক্স আদায়ের হার বরজোড় শতকরা ৫ ভাগ। এ পৌরসভায় ১৪ বছর পর্যন্ত কোন রি-এ্যাসেসমেন্ট হয়নি। যা ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী পৌরসভা পরিদর্শনের সময় পরিদর্শন বইতে লালকালি দিয়ে মার্ক করে স্বাক্ষর করেন। বিদ্যুৎ বিল ১৪ বছরের প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ২৪ মাস বকেয়া ও আনুতোষিকের টাকা ফান্ড শূন্য। কাজ কর্মে কোন জবাবদিহিতা নেই। পরিষদের মিটিং নিয়মিত হয় না। টিএলসি ও ডব্লিসিসি মিটিং কি জিনিস কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কাউন্সিলররা বলতে পারবে না। পৌরসভার ফান্ড ব্যবহারেও কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মেয়র, কাউন্সিলর এবং সচিব নিজেদের ইচ্ছামত টাকা উত্তোলন পূর্বক খরচ করে, যার জন্য বেতন দিতে পারে না।
মেয়র এবং কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থায় ও আদালতে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ আছে। সাইক্লোন সেল্টারের দাখিলকৃত কাগজপত্র ভুয়া, মিথ্যা। যে সমস্ত রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে সেগুলি কোন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নয়। শুধু কিছু লোককে সন্তুষ্ট করার জন্য পাড়াগায়ের রাস্তার উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বপরী পৌরসভা থেকে প্রেরিত সকল তথ্যই সঠিক নয়।
লোক মুখে শোনা যায় যে, এ পৌর পরিষদের কাউন্সিলরগণ এবং একটি দালাল চক্র ও কতিপয় ব্যক্তি তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য নলছিটি পৌরসভার অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদ্বয়দের দুই মাসের মাথায় নলছিটি পৌরসভা থেকে অন্যত্র বদলি করিয়ে দেয়। উল্লেখিত দালাল চক্র ঝালকাঠি পৌরসভার সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অনভিজ্ঞ দুর্নীতিবাজ সহকারী প্রকৌশলীকে নলছিটি পৌরসভায় অতিরিক্ত দায়িত্বে পদায়ন করান এবং একই প্রকৌশলী দিয়ে নামমাত্র দরপত্র আহ্বান করে ঝালকাঠি ও নলছিটি পৌরসভার CTEIP প্রকল্পের টাকা মেয়র, কাউন্সিলরসহ দালাল চক্রের হোতা অনভিজ্ঞ সহকারী প্রকৌশলী নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগী করবে।
সর্বপরি এতবড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা ও জনবল নলছিটি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নেই। উল্লেখ্য যে, নলছিটি পৌর এলাকার সূর্যপাশা গ্রামের এম সাইদুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা তদন্ত পূর্বক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পৌর-২ শাখায় প্রতিবেদন দাখিল করেন।
উক্ত প্রতিবেদনে বর্তমান নলছিটি পৌর পরিষদ দুই বছরে কোনরূপ ঠিকাদারী বিল বা কোন বিলের ভ্যাট, আয়কর কর্তন না করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করায় নলছিটি পৌর মেয়র ও সচিবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, পৌরসভায় এখন যারা যোগদান করেছেন, সবাই নতুন। তাই কাজে একটু ধীরগতি থাকলেও সব ঠিক হয়ে যাবে।
এইচকেআর
