বরগুনায় স্কুল শিক্ষকদের বেতন আত্মসাতের অভিযোগ


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচির আওতায় বরগুনার ২৮০ জন শিক্ষকের বেতনে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ এর বিরুদ্ধে। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাাপন করছে ঐ ২৮০ জন শিক্ষক। যত দ্রুত সম্ভব বেতনের টাকা পরিশোধ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানান তাঁরা। টাকা আত্নসাতের বিষয়ে অসিকার করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কারী প্রতিষ্ঠান এর কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক স্কুলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সেখানে বরগুনা সদর উপজেলা, পাথরঘাটা, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৮০টি স্কুল চালু করা হয়েছে এবং প্রতিটি স্কুলে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি মাস থেকে বরগুনার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ এই শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদান করেন। যেখানে প্রতিটা স্কুলে একজন শিক্ষার্থীকে একটি স্কুল ব্যাগ, নয়টি খাতা, তিনটি পেন্সিল, দুটির আবার ও আর্ট করার জন্য এক ডজন রং পেন্সিল দেয়া হয়।
বরগুনা জেলার চার উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮০ জন শিক্ষক ৮ মাস থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এমনকি প্রকল্পভুক্ত বিদ্যালয়ে আসা ঝরে পড়া শিশুদের প্রতি মাসে বৃত্তির টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সেটাও দেয়া হয়নি। এতে শিশুদের মধ্যে বিদ্যালয়ে আসায় অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। যে ঘর ভাড়া নিয়ে শিখনকেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই ঘরের ভাড়া পরিশোধ করতে নানা কথা শুনতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এ অবস্থায় তারা সংশ্লষ্টি কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পাথরঘাটা উপজেলার ভুক্তভোগী শিক্ষিকা আসমা আক্তার বলেন, আরডিএফ কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন-ভাতাদি, বিদ্যালয়ের ঘর ভাড়া সহ উপকরণ দেয়ার কথা থাকলেও সাত মাস পর্যন্ত দেননি। নিয়োগপত্রে পাঁচ হাজার টাকা সম্মানি-ভাতা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আট মাসের বেতন-ভাতা ও স্কুল ঘরের ভাড়া না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ। যত দ্রুত সম্ভাব আমাদের বেতন-ভাতা চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে, ভাড়া না দেয়ায় ঘর মালিকরা আমাদের ঘর ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দিয়েছেন। বরগুনা সদর উপজেলার আর একজন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মোসা. পারভিন বলেন, আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে এই আট মাস যাবত আমরা কোন বেতন ভাতা ও শিখন স্কুলে ভাড়া পাইনি। আমাদের এখন চলতে কস্ট হচ্ছে। এবং এর আগে ২০২১ সালে এই ঝড়ে পড়া শিশুদের খুঁজে বের করতে আমাদেরকে দিয়ে জরিপ করানো হয়। আমাদের বাংলাদেশ সরকারের সকল শিক্ষকদের একটা দাবী যাতে আমাদের এই ভাতাগুলো পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।
শিখন কেন্দ্রের ঘর মালিক কবির বলেন, আমাকে ঘর ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ১৫০০ টাকা করে দেয়ার কথা বলেছিলো আরডিএফ এনজিও। কিন্তু আজ আট মাস যাবত আমি ঘর ভাড়া বাবদ একটি টাকাও পাইনি। এই ভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তাদের আমার ঘর ছেড়ে দিতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ এর বরগুনা যুগ্ম পরিচালক এনামুল হক বলেন, এই প্রকল্প পরিচালনার জন্য একটি সার্ভে করা হয়ে যেটা পর্যবেক্ষণ করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এই সার্ভে রিপোর্ট আমরা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে পাঠাই। সেখান থেকে আবার একটি তৃতীয় পক্ষকে এটার ভেরিয়েটেনশন রিপোর্ট দেয়ার জন্য দেয়া হয় এই তৃতীয় পক্ষ হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়। এই রিপোর্টটি তিন মাসের মধ্যে দেয়ার কথা ছিলো কিন্তু জেলা প্রসাশক মহোদয় এটি এখন পর্যন্ত দেননি। এবং ৬ মাস অতিক্রম হয়ে যায় যার কারনে জুন মাস পার হয়ে যায় এবং আমাদের শিক্ষকদের বেতন ভাতা আটকে যায়। এই ভেরিয়েনটেশন রিপোর্টটি শেষ হওয়ার পরে আমাদের শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন। আর এই বেতনের টাকাটি আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিওর হাতে নয় সরাসরি শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দিবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষা ব্যুরো। এটা সম্পুর্ন রুপে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর হাতে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর উপপরিচালক জিহাদুল ইসলাম জিহাদ বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত ভেরিয়েনটেশন রিপোর্ট হাতে পাইনি যে কারনে আমরা এই শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ কে দিতে পারিনি। গত অর্থ বছরে ভেরিয়েনটেশন রিপোর্টটি হাতে না পাওয়ার জন্য এই শিক্ষকদের বেতন ভাতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। এর আগে ২০২১ সালে ঝরে পরা শিশুদের খুঁজে বের করার জন্য যে জরিপ করা হয় তার ভাতা কেন আজ অবধি দেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ভাতাটি আমাদের না দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয় চিঠিতে বলা হয়েছে পরবর্তি নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যাতে এই ভাতার টাকাটি না দেয়া হয়।
এইচকেআর
