ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

জাহিদ আহনাফ

প্রাচ্যের ভেনিচ বলা হয় বরিশালকে। আর সেই ভেনিচের  বুকে কীর্তনখোলা নদীর কোল ঘেঁষে দক্ষিনের শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ যেন তার মাথার উপরে এসে ছুঁই ছুঁই করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে যেন স্বর্গীয় সৌন্দর্য তারার মত জ্বলজ্বল  করে। ক্ষীণ আলোয় তার দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলার বুকে। আজ এই স্বর্গরাজ্যের কোণায় কোণায় তাকিয়ে দেখবো তার সৌন্দর্যের স্ফুলিঙ্গ। 

সড়কজুড়ে রয়েছে শত শত কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল বৃক্ষের সারি । সবুজে ঘেরা এ মহাসড়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ সড়কের দুপাশে টংয়ের দোকান শিক্ষার্থীদের আড্ডার অন্যতম জায়গা। মহাসড়কটিতে হাঁটতে হাঁটতে কানে ভেসে আসবে পাখির কিচির মিচির শব্দ। মনে হবে গ্রাম বাংলার কোনো এক মেঠোপথ দিয়ে হাঁটছি। দুপাশে সবুজের সমারোহ সৌন্দর্যের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যানজট কোলাহলমুক্ত এ সড়কে শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝেই তাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতে আসেন।রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী ভোলা রোড তার সপ্নের অপূর্ণতা ও এর  সৌন্দর্য উপলব্ধি থেকে লিখেছেন - " আমার কাছে ‘ভোলা রোড’ বৃষ্টির দিনে স্বর্গের মতো লাগে। শুধু অপূর্ণ ইচ্ছে রয়ে গেছে, হালকা বৃষ্টি বা ঝুম বৃষ্টির পরে ওই রাস্তায় সাইকেল চালানো। সাইকেল পাই তো মানুষ পাই না। আবার যখন কেউ বলে আসো তখন আবার বৃষ্টি হয় না "।

কয়েকটি তালগাছ এক পায়ে  দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের মতো চিকন একটি সরু রাস্তা। ঘাস গজিয়েছে। পাঁশ দিয়ে বয়ে গেছে  সীমানা ঘেষা আকাঁবাকাঁ ছোট একটি খাল। আর এখানেই সারি সারি শিক্ষার্থীরা কখনো কখনো গোল হয়ে বসে তাদের আচরন স্কুলের পাঠ রপ্ত করে। কেউ কেউ ক্লান্তি কাটাতে বিকালের সূর্যের আলো থেকে নিজেকে আড়াল করতে  আসে। ভাদ্রের পাকা তাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ,  শ্রাবনেই সব তাল নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার গল্পও রয়েছে। দলবেধে তালতলায় আড্ডা। বান্ধবীর হাতের জঘন্য রান্না খেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা রাধুনীর তকমা দেওয়া হয় এই তালতলায়। এখানে বসলে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'তালগাছ'কবিতাটি-

"তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে। "

মুক্তমঞ্চে দাড়িয়ে মুক্তবলি প্রকাশের প্রবল ইচ্ছে নিয়ে যখন নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত কথা গুলো ব্যক্ত করতে চাইবেন তখন চারদিকে চারটি চত্বর আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কেউ শুনুক আর না শুনুক এই চত্বরগুলো আপনার কথা শুনবেই। দশবছর ধরে ওরা সবার গল্প শুনে আসছে। কেউ ওদের গল্প শুনেনি,  বলেনি।নচত্বরগুলো যেন হাজারো গল্পের  নীরব কথক।  এই চারটি চত্বরের আবার বাহারি নামও রয়েছ -প্রীতিলতা চত্বর, হতাশা চত্বর, এগারো চত্বর আর গাজা চত্বর  । আপনি সাহিত্যিক বনে যেতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরগুলো একটু ঘুরে দেখুন, সেখানে বসুন, সেখানে লেখা সাহিত্যিক টার্ম গুলোয় আপনার  চোখগুলো বুলিয়ে নিন। দীর্ঘ ১০ বছরের এই চত্বরে অনেক শিক্ষার্থী তাদের গল্প কুড়িয়ে নিতে আসে, তাদের স্মৃতির অন্দরমহল থেকে জিজ্ঞেস করতে আসে-'এখন তুমি কার দখলে?' বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের ইতি ঘটে। উচ্চশিক্ষিত হিসেবে সনদের পাশাপাশি মেলে শিক্ষার  বাস্তবিক জ্ঞান। বন্ধু কিংবা জীবনসঙ্গীর দেখা মেলে শেষ বিদ্যাপীঠ থেকে। এ যে কোনো পাপ নয়। এ যে স্বর্গীয় আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আর এই আবেগের এককোন জুড়ে থাকে চত্বরের স্মৃতি। কারো প্রেমের পুরোটা দখল করে রাখে এই চত্বর। 

আঁকাবাঁকা পথ,  উচুনিচু জোড়া ব্রিজ, দুইপাশে দুই সর্পিল নদী, চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অপার হয়ে বসে আছে। প্রকৃতির আরো কত অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখের সামনে উপস্থিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  দপদপিয়া পার হলেই প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্যের দেখা মেলে। এই রাজ্যে সবাই যেন রাজা। প্রকৃতিকে তারা শাসন করে। এই রাজ্যেকে আরো সুন্দর করে তুলেছে কাপল রোড ও লন্ডন ব্রিজ। 

 


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন