ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধে সুপারিশ


ফ্রি ফায়ার ও পাবজির মতো জনপ্রিয় দুই গেম বন্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সুপারিশ করেছে শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে খবর।
গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর পরই দেশজুড়ে তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এটি।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
জবাবে সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিয়ে উল্টো গেমে আসক্ত তরুণ-তরুণীদের অভিভাবকদের এক হাত নিলেন মন্ত্রী।
শনিবার দুপুরে এক প্রতিক্রিয়ায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না কেন? অদক্ষতা আপনাদের। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল আছে সেটা ইউজ করেন। সন্তানের কতটুকু গেম খেলা উচিত, কতটুকু আড্ডা দেয়া উচিত, কতটুকু বাইরে যাওয়া উচিত, কতটুকু ঘরে থাকা উচিত; এসব বাবা-মাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সন্তানকে এটুকু আয়ত্বে না নিতে পারা অভিভাবকদের ব্যর্থতা।’
অভিভাবকদের উল্টো প্রশ্ন ছুড়েন মন্ত্রী, ‘ছেলেমেয়েরা আর কোনো কারণে নষ্ট হয় না? তারা যখন মাদক নেয় তখন নষ্ট হয় না? গেমের পেছনে না লেগে কেন লেগে ওগুলো নিয়ন্ত্রণ করুন। গেমের কারণে কী জন্য ইন্টারনেটের সুবিধা থেকে ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করবেন? আপনাদের সমস্ত জেনারেশন খোঁজেন। কোন জেনারেশন গেম খেলে নাই? আমাদের সময়ে ভিডিও গেমসের দোকান ছিল। আইডিবি ভবনের কম্পিউটার দোকান থেকে গেমের সিডি পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে। আসলে সন্তান ইন্টারনেটে কোন সাইটে যেতে পারবে না পারবে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কতক্ষণ থাকতে পারবে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরাপাবজি ও ফ্রি ফায়ারে গেমে চরম আসক্ত হয়ে পড়েছে। এই গেম দুটো কীভাবে বন্ধ করা যায়— এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ইন্টারনেটের জগতে কিছুই বন্ধ করা যায় না। আর বন্ধ করাও সমাধান নয়। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা—এটা কোনো সমাধান না। আমরা ফেসবুক বন্ধ করেছিলাম, কিন্তু ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) দিয়ে ফেসবুক চালিয়েছে সবাই। এখন বলুন ভিপিএন বন্ধ করবে কে?’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম দুটি নিয়ন্ত্রনের দাবি জানিয়েছিলেন।
ফ্রি ফায়ার ও পাবজি আসক্তির ভয়াবহতা তুলে ধরতে উদাহরণ দিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, গত ২১ মে চাঁদপুরে মামুন (১৪) নামে এক তরুণ গেম খেলতে মোবাইলের ডেটা কেনার টাকা না পেয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করে। তাই টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং নিয়ন্ত্রক কমিশনকে দ্রুততার সহিত এ গেমগুলোর অপব্যবহার বন্ধ এবং প্রযুক্তির ভালো দিক তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়তে আহ্বান জানাচ্ছি।
সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। বাংলাদেশেও পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল, পরে আবার চালু করা হয়।
প্রসঙ্গত, চীনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালে তৈরি করা যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও গেমটির মতোই। ২০১৯ সালে এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোড করা মোবাইল গেম ।
গেমটি অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুট থেকে পড়ে আসা ৫০ জন ও তার অধিক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
বর্তমানে ফ্রি ফায়ারের উন্নত সংস্করণে কাজ চলছে যা ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স নামে পরিচিত।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বন্দুক দিয়ে মসজিদে মুসলমানদের হত্যা এবং সেই দৃশ্য ফেসবুক লাইভের বিষয়টি অনেকেই পাবজির সঙ্গে তুলনা করেন।
এসব গেম কোমলমতিদের ওপর মনস্তাত্বিক প্রভাব ফেলছে এবং তরুণদের আগ্রাসী করে তুলছে বলে মত দিয়েছেন মনবিজ্ঞানীরা।
এমবি
