আমতলীতে লঘুচাপ ও অতিবর্ষণে পৌরশহরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত


লঘুচাপের প্রভাব ও অতিবর্ষণ পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বরগুনার আমতলী পৌরশহরসহ দু’উপজেলা আমতলী ও তালতলীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমতলী- পুরাকাটা ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ছাড়াও তলিয়ে গেছে আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক। অতি বৃষ্টিতে আউশের ধান ও আমনের বীজতলা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। দু’উপজেলার সর্বত্র দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পরেছে দু’উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক লক্ষাধীক মানুষ।
জানাগেছে, লঘুচাপের প্রভাব ও অতিবর্ষণ পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমতলী পৌরশহরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাহিরের বসবাসরত মানুষের বসতবাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় অতিকষ্টে তারা জীবনযাপন করছে। পানির কারনে ওই সকল পরিবার দুপুরে রান্না পর্যন্ত করতে পারেনি। অনেকে ঘর-বাড়ী ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
অতি বর্ষণের ফলে পানিতে মাঠ-ঘাট থই-থই করছে। চারদিকে পানি আর পানি। তলিয়ে গেছে দু’উপজেলার অধিকাংশ আউশের ধান ক্ষেত ও আমনের বীজতলা। আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। স্লুইজগেটগুলো দিয়ে তেমন একটা পানি নিস্কাশন না হওয়ায় দু’উপজেলার সর্বত্র ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দ্রæত পানি নিস্কাশন না হলে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভূক্তভোগী কৃষকরা। দ্রুত তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের রোপনকৃত আউশ ধানের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। স্লুইজগেটগুলো দিয়ে তেমন একটা পানি নিস্কাশন না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে।
আজ রবিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমতলীর ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, আমুয়ারচর, গরুর বাজার, ওয়াবদা বøক এলাকা পৌর শহরের পুরাতন বাজার, মিঠা বাজার (বউ বাজার) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় বুক পরিমাণ পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষ সড়কে উঠছে। ফেরী চলাচল না করায় জেলা শহর বরগুনার সাথে ৪ ঘন্টা সড়কপথে যান চলাচলে বন্ধ ছিলো। বেরীবাঁধ না থাকায় আজো জোয়ারের পানিতে উপজেলার গাজীপুর বন্দর তলিয়ে গেছে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে ক্রেতা বিক্রেতারা। পৌর শহরের পুরাতন বাজারের সড়কে হাটু পরিমাণ পানি উঠার কারনে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এছাড়া অতি বৃষ্টিতে পৌরশহরের অনেক সড়কে পানি জমে জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
তালতলী উপজেলার ফকিরহাট, নিশানবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, ছকিনা, নিউপাড়া, গাবতলী, বগীসহ অধিকাংশ নিন্মাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বেরীবাঁধের বাহিরে বসবাস করা পরিবারগুলোকে সাবধানে ও নিরাপদে আশ্রয় থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সর্তক করতে বলা হয়েছে।
বেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসতরত আমতলী আমুয়ারচরের বাসিন্ধা ছকিনা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে মোগো ঘর তলাইয়া গেছে। দুপুরে রান্না পর্যন্ত করতে পারিনি। পোলাপাইন লইয়া দুপুরে না খাইয়া রইছি। আবার রাইতে যদি পানি বাড়ে তাহলে এই বৃষ্টির মধ্যে কই যামু।
চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের কৃষক শানু মিয়া জানায়, বিলের চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। আমাদের এলাকার সকল জমিতে রোপনকৃত আউস ধান ও আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
বেরীবাঁধের বাহিরে বসবাসতরত তালতলীর জয়ালভাঙ্গা এলাকার জেলে সোবাহান মাঝি জানায়, তার বসত ঘরসহ এখানে বসবাসরত সকলের ঘর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। তারা বৃষ্টির মধ্যে ছাপড়া দিয়ে উচু বেরীবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় উপজেলার সর্বত্র জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকের আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানির নীচে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আরো বৃদ্ধি পেলে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম পান্না মুঠোফোনে বলেন, পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দু’উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কোথাও বেরীবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকেনি।
এএজে
