ঢাকা রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

Motobad news

ঝালকাঠিতে বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারমানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

ঝালকাঠিতে বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারমানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (নৌকা প্রতীকে বিজয়ী) আবুল বাসার খানের বিরুদ্ধে। 

বুধবার সকালে পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সাধারণ সদস্য (মেম্বার) সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্যানেল চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাসার খানকে গত ১৬ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাময়িক বরখাস্ত করেন। তিন দিনের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যানকে তাঁর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে এ নোটিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ পেয়ে আবুল বাশার খান পরিষদের রেজুলেশন, ক্যাশবই, ব্যাংকের চেকবইসহ দাপ্তরিক কাগজপত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের কক্ষ তিনি তালা দিয়ে আটকে রাখেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী দাপ্তরিক কাগজপত্র প্যানেল চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা দিচ্ছেন না। এতে ইউনিয়ন পরিষদের সব ধরণের কাজ বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে নাগরিক সেবা। আর এতে প্রায় দুই মাস ধরে বিপাকে পড়েছে ইউনিয়নের জনসাধারণ। গত ২৩ জুন ইউপি সদস্যরা সভা করে রেজ্যুলেশনসহ দরখাস্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। এর পরেও তিনি ক্ষমতা বুঝিয়ে দিচ্ছেন না।

ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেন, সাময়িক বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান আবুল বাসার খান দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নাগরিক সনদপত্র, ওয়ারিশ সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদে সাক্ষর নিতে নাগরিকদের এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঘুরতে হতো। এতে হয়রানির শিকার হতেন ইউনিয়নবাসী। আবুল বাসার খানের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যাবহার,  স্বেচ্ছাচারিতা, নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাঁর খামখেয়ালিপনার কারণে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ করা টিআর, কাবিখা ও কাবিটার চার লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত যায়। এতে ইউনিয়নবাসী সরকারের এ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। 

উল্লেখ্য, গত তিন বছরের ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্সের ১২ লাখ ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা মাসিক সভায় আলোচনা বা রেজুলেশন না করে আত্মসাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসার খান। তাঁর বিরুদ্ধে করোনাকালে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের চাল আত্মসাত এবং প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের বরাদ্দ অসহায় মানুষের জন্য ২৫০০ টাকার অর্থ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তিনি এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে তথ্য সেবাকেন্দ্রের মালামাল না কিনে অর্থ আত্মসাত, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ফটোকপি মেশিন কেনা বাবদ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাত, ইউনিয়ন ভিত্তিক করোনা টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের আপ্যায়নের ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাত, ট্রেড লাইসেন্স ফি, ওয়ারিশ ফি, ওয়ারিশ সনদ ফি, অটোরিক্সা লাইসেন্স ফি এর তিন লাখ টাকা আত্মসাত, প্রাক্তন ইউপি সচিব দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশনসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া ২০ সেট রিং¯øাপ ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে বিতরণের অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো সেতুর লোহার মালামাল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসার খানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার  আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের অচলাবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার খান জানান, নোটিশের বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে যাবো। তাই ইউপি সদস্যদের ধৈয্য ধারণ করার জন্য বলেছি।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন