ঢাকা রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

Motobad news

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল বরগুনায়

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল বরগুনায়
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এ জঘন্য হত্যাকান্ডের প্রথম প্রতিবাদ হয় বরগুনায়। বরগুনা মহকুমার তৎকালীন এসডিও সিরাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ হয়। আবার বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার যখন জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন আইন বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাব  আনেন তখন বরগুনার সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কঠোর ভাষায় তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন।

বরগুনার প্রবীণ রাজনীতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিচারণে জানা যায়, তৎকালীন বরগুনা ছাত্রলীগ নেতা ও পরে ৪নং কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব মৃধার কাছে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের হত্যাকান্ডের সংবাদ পান মহকুমা পর্যায়ের প্রধান এসডিও সিরাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি সিদ্ধান্ত  নেন এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করার এবং ঘোষণা করেন বরগুনায় যদি কেউ খুনি সরকারের পক্ষে মিছিল বের করে তবে তাদের গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর খুনি সরকারের পক্ষে বরগুনার কেউ মিছিল বের করতে সাহস পায়নি।

এসডিও সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন বরগুনা মহকুমার তিন সংসদ সদস্য আসমত আলী শিকদার, শাহজাদা মালেক খান ও নিজাম উদ্দীন আহমেদসহ বরগুনার তৎকালীন অনেক সরকারি কর্মকর্তা। রাজনৈতিক, সামাজিক নেতাদের মধ্য ছিলেন বাকশাল যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম শিকদার, ইউনুস শরীফ, বরগুনা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম, ন্যাপ সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আবদুর রশীদ, বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. মান্নান মিঞা, সুলতান জোমাদ্দার, মোতালেব মৃধা, বরগুনা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। 

তাদের নেতৃত্বে অনেক উদ্দীপ্ত তরুণ-যুবক সশস্ত্র প্রতিরোধ করার জন্য সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে যোগ দেন। বরগুনার পুলিশের অস্ত্র তখন বিদ্রোহীদের দখলে। তৎকালীন ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পরে বরগুনার সংসদ সদস্য মরহুম সিদ্দিকুর রহমান যুবকদের নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন। তবে যথাযথ সহযোগিতার অভাবে এ প্রতিরোধ মাত্র তিন দিন পর্যন্ত  অটুট ছিল। সিদ্দিকুর রহমানকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় দুই বছর সিদ্দিকুর রহমান কারাবন্দি ছিলেন। বিদ্রোহী নেতাদের খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করা হয়। অমানুষিক নির্যাতন নেমে আসে তাদের ওপর। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সিরাজউদ্দীন আহমেদকে তৎকালীন অবৈধ সরকার চাকরিচ্যুত করে। এর পরের ইতিহাস তো অনেকেরই জানা।

সিরাজউদ্দীন আহমেদ তার প্রকাশিত স্মৃতিচারণে লেখেন, ‘আমি গৌরবান্বিত যে একমাত্র আমাদের বরগুনায় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল।’


 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন