হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব: তদন্ত কমিটি গঠন


বরগুনায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ঘুরে শেষ পর্যন্ত গৃহবধূর রাস্তায় সন্তান প্রসবের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাঝকিয়া সিদ্দিকিকে।
কমিটির অন্য সদস্য হলেন হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা নীহার রঞ্জন বৈদ্য। তাঁদের আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহারফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতালের কারও কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন গৃহবধূ রীমা বেগম। সন্ধ্যার পর তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। প্রসববেদনা নিয়েই তিনি হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন। তখন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তাঁরা ওই গৃহবধূকে পৌর শহরের বটতলা এলাকার আলরাজি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওই গৃহবধূর স্বজনেরা তাঁকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। কিন্তু আলরাজি ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় কর্তৃপক্ষ তাঁকে পশু হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
গৃহবধূর স্বজনেরা জানান, ওই ক্লিনিকেও চিকিৎসক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাঁকে অন্য আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামানো হয়। তখন রাস্তায় ছেলেসন্তানের জন্ম দেন রীমা। পরে প্রসূতি ও নবজাতককে উদ্ধার করে শেফা ক্লিনিকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসূতি রীমার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রসূতি রীমা বেগম (১৯) সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি এলাকার রিকশাচালক মো. ইব্রাহিমের স্ত্রী। মো. ইব্রাহীম আজ বিকেলে বলেন, ঘটনার দিন রাতে যুবলীগ নেতা আবু হানিফ ওরফে দোলন ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে রীমাকে বরিশালে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসক আজ দুপুরে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেন। পরবর্তী সময়ে কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে তাঁকে জানাতে বলেছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও নবজাতক সুস্থ আছে বলে জানান ইব্রাহীম।
গৃহবধূর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সকালে তাঁর অপারেশন করেছেন। মা ও ছেলে এখন সুস্থ।’
দরিদ্র ওই গৃহবধূর চিকিৎসার জন্য আজ দুপুরে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সড়কে সন্তান প্রসব করার খবরটি গণমাধ্যম থেকে জানতে পারি। এরপর ওই প্রসূতির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। পরবর্তীকালেও তাঁদের সহায়তার দরকার হলে আমাদের জানাতে বলেছি।’
এএজে
