আমতলীতে নৌকা তৈরির গ্রাম


গ্রামের পাশে গেলেই শোনা যাবে ঠুকঠাক শব্দ। একটি– দুটি নয়, ঘরে ঘরে এ শব্দ। শব্দ যেন মাধুরী মিশিয়ে যায়। চলছে নৌকা তৈরির ধুম। বর্ষাকাল এলেই এলাকার মানুষের প্রয়োজন হয় নৌকার। নৌকা তৈরিকে ঘিরে জীবিকার তাগিদে গড়ে উঠেছে চুনাখালী গ্রামের মানুষের পেশা। তারা নৌকার কারিগর।
দেড়শ' বছর ধরে বংশপরম্পরায় এ পেশাটি ধরে রেখেছে এ গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার। এ গ্রামটি এখন সবার কাছে নৌকা তৈরির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক মানুষের।
আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নে চুনাখালী গ্রামের অবস্থান। বর্ষাকাল এলেই কর্মমুখর হয়ে ওঠে চুনাখালী গ্রাম। সকাল হলেই হাতুড়ি-বাডইল আর কাঠের খুট-খাট শব্দে মুখরিত হয় এ গ্রামটি। সব সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখর গ্রামের মোড়ে মোড়ে অবস্থিত দোকানিরাও ব্যস্ত থাকে চা-পান আর সিগারেট বিক্রিতে। এ গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের সঙ্গে মাসিক কিংবা দৈনিক মজুরিতে আশপাশের গ্রামের আরও শতাধিক কারিগরের কর্মসংস্থান হয়েছে নৌকা তৈরির কাজে। বর্ষাকালের ৩ মাস কাজ করে আবার ফিরে যাবে তাদের পুরনো পেশায়।
কুকুয়া ইউপির সাবেক মো. কায়েসুর রহমান জানান, দূর-দূরান্তের মানুষ এ গ্রামকে 'নৌকা গ্রাম' হিসেবে চেনে। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় পলিথিন টানিয়ে আবার কেউ খড়ের ছাপড়া দিয়ে নৌকা তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর বানিয়েছেন। দু'জন কাঠমিস্ত্রি মিলে গড়ে প্রতিদিন একটি নৌকা তৈরি করতে পারেন। প্রতিদিন কারিগররা পান তিন থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা। এখানকার তৈরি নৌকাকে এ এলাকায় ডিঙ্গি নৌকা বলে। সহজেই ও অল্প পানিতে এ নৌকা চলাচল করতে পারে। তাই এ নৌকার চাহিদা এলাকায় বেশি।
তালতলী উপজেলার ছকিনা থেকে মো. হাইরাজ এসেছেন নৌকা কিনতে। তিনি বলেন, এখানকার নৌকা খুব ভালো ও টেকসই। তাই অনেক দূর থেকে এসেছি।
জাহিদুল ইসলাম মিস্ত্রী জানান, অনেক বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তার বাবা-দাদাসহ পূর্বপুরুষ থেকে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তার ছেলে রাসেলও এ পেশায় যুক্ত হয়েছে।
কুকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম তালুকদার জানান, পূর্ব চুনাখালী গ্রামটি নৌকা তৈরির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। তাদের এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।
এইচকেআর
