ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

‍'জোয়ারের পানিতে ঘরের চাউল দুগ্গাও ভাসাই লইয়া গ্যাছে'

‍'জোয়ারের পানিতে ঘরের চাউল দুগ্গাও ভাসাই লইয়া গ্যাছে'
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

জেলে নৌকায় কাজ করে কোনোরকম সংসার চলতো অহিদুলের। মাস শেষে বারো হাজার টাকা বেতন পেতেন, তা দিয়েই কেটে যায় সংসারের খরচ। জায়গা-জমি বলতে অতিরিক্ত কিছুই নেই তার। তিন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবারের কর্তা তিনি নিজেই। 

ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বাহিরে একটি ছোট ঘর ছিল সেখানেই থাকতো তারা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আর পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে শেষ সম্বল ঘরখানাও ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। ফলে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে এখন বন্যা নিয়ন্ত্রক বেড়িবাঁধের ওপর কাগজের ছাপড়া দিয়েই সংসার পেতেছেন তারা। 

আজ বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা বিচ্ছিন্ন চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ এলাকা গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

অহিদুল মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগম বলেছেন, 'এ্যাহন (এখন) আমাগো (আমাদের) আর কি দেখতো আইছেন ছার (স্যার) পোলাপাইন লইয়া কেমনে থাকমু হেই চিন্তার আগে ভাবতে হয় খামু কি। জোয়ারের পানিতে ঘরের চাউল দুগ্গাও ভাসাই লইয়া গ্যাছে। নিজেগো একটু জায়গাও নাই যে, ঘর কইরা ভেরির মইধ্যে থাকমু। এমনকি লাকরি আর রানধুইন্না চুলাডাও নাই।’

অহিদুল মিয়া ছাপড়া ঘরের পূর্ব পাশেই আরেক বসতি কাওসার মোল্লা পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনিও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। একটু পশ্চিম পাশের রাসেল মোল্লা নামের আরেক  বসতি। পেশায় মোটরসাইকেল চালক। সব হারিয়ে ওয়াপদা রাস্তায় থাকছেন। এভাবেই অনেক পরিবার পলিথিনের ছাউনিতে কোনো রকম দিন যাপত করছেন তারা।

ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফ মিয়া বলেন, প্রথমদিন নয়ারচর ও চরবেষ্টিন বাঁধ ভেঙেপানি ঢুকেছে ওই দুই গ্রামে। দ্বিতীয় দিনেও পানি ঢুকেছে। আর আন্ডারচরের ভাঙা বাঁধ সংস্কার না করায় সেই চরেও দুইদিন পানি ঢুকে প্লাবিত হয়।

তিনি বলেন, দক্ষিণ চরমোন্তাজে কয়েকটি পরিবার বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে শুনেছি। পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনের তাণ্ডবে রাঙ্গাবালী, ছোটবাইশদিয়া, চালিতাবুনিয়া, চরমোন্তাজ, বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবি ইউনিয়নে ২ হাজার ৩৪০টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে ১১০টির। জোয়ারের তোড়ে পাঁচ হাজার ৫১০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চালিতাবুনিয়া, চরমোন্তাজ ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব পিআইও হুমায়ূন কবির বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে ক্ষয়ক্ষতি অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, দ্বিতীয় দিনের জোয়ারে ১৫টি গ্রামের বেশি প্লাবিত হয়। এতে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে যারা দুপুরে রান্না করতে পারেনি, তাদের জন্য চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব। পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে বিধ্বস্ত হওয়া ঘরগুলোর পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন