ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বদলে দিয়েছে পাথরঘাটা উপকূলের দৃশ্যপট


বুধবার দুপুরে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে বরগুনার পাথরঘাটা সহ আশেপাশের জনপদ। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ডুবে গেছে আবাদি জমির উঠতি ফসল আর ঘরগৃহস্থালীসহ সবকিছু।
ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” আতঙ্কে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে যখন নির্ঘুম রাত কাটছিলো উপকূলবাসীর ঠিক তখন-ই ভরা পূর্নিমার জোতে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা জোয়ারের নোনাপানি উপজেলার কয়েকটি স্থানের দুর্বল বেরিবাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।
উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যকেন্দ্র চরদুয়ানী বাজারটি মঙ্গলবার দিন ও রাতে সমূদ্রের ফুসে ওঠা জলোচ্ছ্বাসেই তলিয়ে যায়।
বুধবার দুপুরে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কাকচিড়া থেকে গোলাম রাব্বি মুঠোফোনে জানান, লঞ্চঘাট সংলগ্ন বেরিবাঁধ রাতেই ভেসেগেছে। চরদুয়ানী বাজারের দোকানিরাও তাদের মালামাল দিনের আলোতে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সক্ষম হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী কবির হাওলাদার। জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ছোটবড় অসংখ মাছের ঘেরে, ফসলি জমিতে।
বেরিবাঁধের বাইরের সকল ঘের ভেসেগেছে বলে দাবী করছেন উপজেলার টেংরা এলাকার নাসিরউদ্দিন। চরদুয়ানী এলাকার শিমুল কীর্ত্তনিয়া জানিয়েছে,তাদের গ্রামের ইন্দ্রজীৎ হালদার বাড়ীর একমাত্র খাবার পানির পুকুরটি জোয়ারের নোনা জলে তলিয়ে গেছে। সেখানে এখন সুপেয়পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
চরলাঠিমারা বাঁধের বাহিরে বসবাসকারী নয়ন খাঁ ও তার স্ত্রী পারভিন বেগম জানান, বইন্যায় (বন্যায়) পানি বারছে (পানি বৃদ্ধির কারনে) মোগোতা সহ অনেক বাড়ী তলাইছে জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে)। ঘর-বাড়ী তলাইছে হেইয়ার লইগ্যা রান্নার চুলাও তলাইছে (তলিয়েছে) রানতে পারিনাই হেইয়ার লইগ্যা সে জন্য) রুডি (রুটি) খাইছি।
দুপুরে মোরা সহ এহানের অনেকেই বেকারী দিয়া রুডি আইন্না খাইছি (এলাকার অনেক পরিবার বেকারী থেকে কেনা বনরুটি খেয়েছি)। বাইনচটকী ফেরীর গ্যাংওয়ে ও সংযোগ সড়ক ডুবে জেলা সদরের সঙ্গে সড়কযোগাযোগ বন্ধহয়ে গেছে। পাথরঘাটা পৌরশহর সংলগ্ন মানব সৃষ্ট নিলিমাপয়েন্ট পর্যটনকেন্দ্রের বেরিবাধ এবং সেখানকার সৌন্দর্যে নির্মিত রঙীন ব্লকগুলোর ক্ষতি হয়েছে।
পাথরঘাটার দক্ষিণের জনপদ চরলাঠিমারা, জীন্বতলা, পদ্মারভাঙ্গন, রুহিতা, নিজলাঠিমারা এলাকার বেরিবাধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে।
ঝড় শুরু হওয়ার আগে মঙ্গলবার থেকে উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বুধবার দুপুরের দিকে পুনরায় চালু করেছেন পাথরঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ।
এছাড়াও মোবাইল নেট দুর্বল এবং মাঝে মাঝে সম্পূর্ন সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা কোনো দপ্তরের কোনো কর্তাদের কিংবা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।
তবে মাঠে দেখামিলছে সিপিবি'র সদস্যদের। তারা এইদূর্যোগে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানাগেল তাদের একজন টিমলিডারের সঙ্গে কথাবলে।
আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোতে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দেখামেলেনি। তারা অপেক্ষায় আছে “ঘূর্ণিঝড় ইয়াস” পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উপর দিয়ে চলে যায়কিনি সেটি দেখার জন্য। তবে ঝড়ের তান্ডব আরও ক্ষিপ্র হলে সন্ধ্যের আগেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আতঙ্কিত উপকূলবাসীর ঢল নামতে পারে বলে ধারনা করছেন অভিজ্ঞমহল।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা সুলতানা জানিয়েছেন, ১০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুকনো খাবার ও পানিয়জল এর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এ উপজেলায় ইতিমধ্যেই ঝড়বাতাসের তান্ডবে অগনিত গাছ ভেঙে ও উপরে পরেছে। জলমগ্ন অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এইচকেআর
