প্রতিবন্ধী বাবা, মাকে অন্ধকার ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখলেন সন্তান


বরগুনার বামনা উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামে বসত ঘর দখলে রাখার কৌশল হিসাবে প্রতিবন্ধী বাবা, মা ও বোনকে অন্ধকার ঘরের মধ্যে দুই দিন ধরে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে সন্তানের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওই সন্তানের নাম মো. মানিক মিয়া। তিনি উপজেলার পোটকাখালী গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী মো. আমজেদ আলীর ছেলে। প্রায় ৩০ ঘন্টা পর পুলিশের সহায়তায় তাদের মুক্ত করেন স্থানীয় সংবাদকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
অভিযোগে জানাগেছে, গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যান বামনা উপজেলা সদরের অধিকাংশ মানুষ। এই সুযোগে বিরোধীয় জমিতে থাকা ভবনের একটি কক্ষ জোর পূর্বক দখল করেন সদ্য প্রবাস ফেরত মো. মানিক মিয়া। পরে ওই কক্ষটি স্থায়ী দখলের রাখার কৌশল হিসাবে তার প্রতিবন্ধী বাবা, মা ও বোনকে কক্ষের ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ২ দিন ধরে ওই বৃদ্ধরা সেখানে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
জানাগেছে, প্রবাসী মানিক মিয়া ও তার নিকট আত্মীয় মাদ্রাসা শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম দুজনে মিলে কলেজ রোডের পশ্চিম সফিপুর গ্রামে ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। তখন মানিক মিয়া প্রবাসে ছিলেন। ওই জমিতে একটি টিন সেট পাকা ঘর ও একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ঠ একতলা ভবন ছিলো। শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম একতলা ভবনটিতে ও মানিক মিয়ার পরিবার তিন কক্ষের টিনসেট ভবনটিতে বসবাস করে আসছেন। প্রবাস থেকে ফিরে মানিক মিয়া ভবনের একটি কক্ষ দাবী করেন। দ্বির্ঘদিন ধরে ওই ভবনের একটি কক্ষ দখলের চেষ্টা করেন তিনি। পরে গত ২৫ জুন ওই ভবনের কক্ষটি জোর পূর্বক দখল করেন। এসময় ভবনে থাকা মালামাল ভাংচুর ককরে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে ওই কক্ষটি দখলে রাখার জন্য তার বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী বাবা-মা ও বোনকে দুই দিন ধরে তালাবদ্ধ করে রাখেন ছেলে।
এদিকে ফিরোজা বেগম গত ২৬ জুন বিকালে তার কক্ষ দখল ও ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে বামনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান একটি কক্ষে তিনজন লোক তালাবদ্ধ। তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও ছেলে মানিক মিয়া তার বাবা-মা ও বোনকে মুক্ত করেননি। পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি বামনা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. বশিরুল আলম কে জানালে তিনি সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ২৬ জুন রাত ১২টার দিকে তাদের মুক্ত করেন।
এব্যাপারে ভবনটিতে থাকা শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম বলেন, ১০-১২জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মানিক মিয়া তার কক্ষে প্রবেশ করেন। কক্ষে থাকা মালামাল ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরে কক্ষটির ভিতরে তিনজনকে তালাদিয়ে সে চলে যায়। তাৎক্ষনিক আমি ৯৯৯ এ কল দেই ।
বামনা থানার পুলিশ এসে আমার কক্ষে থাকা মালামাল বাহিরে ছড়ানো ছিটানো দেখেন। তবে তারা কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যান। কেন প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ বাবা-মাকে কক্ষের ভিতর ২দিন তালাবদ্ধ করে ভবন দখলে রাখার চেষ্টা করেন জানতে চাইলে অভিযুক্ত মানিক মিয়া বলেন, আমার বাবা-মাকে আমি বদ্ধ করে রেখেছি তাতে আপনাদের কি? তালা দিয়ে না রাখলে ওরা আবার কক্ষে ঢুকবে।
বামনা উপজেলার মানবাধিকার কর্মী ওবায়দুল কবীর আকন্দ বলেন, বিদ্যুত ও পানিবিহীন কক্ষে দুই দিন ধরে বৃদ্ধ বাবা-মা ও বোনকে তালাদিয়ে রেখে ভবন দখলের চেষ্টা করার খবরটি ন্যাক্কার জনক। কোন সু সন্তান এমন কাজটি করতে পারেন না।
বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধূরী কামরুজ্জামান সগির বলেন, উভয় পক্ষ মিলে জমি কিনেছিলেন। সেখানে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা ছিলো। আমরা বৃদ্ধ বাবা-মাকে তালাবদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে রাতে ওসিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তাদেরকে তালামুক্ত করে শালিস না হওয়া পর্যন্ত ওই কক্ষটি আমরা তালাবদ্ধ করে রাখি। শালিসিতে যারা এর মালিক হবেন তারা কক্ষটি দখলে থাকবেন।
বামনা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. বশিরুল আলম বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলো। উভয় পক্ষকে থানায় এসে মিমাংসার জন্য বলা হয়েছিলো। তবে ৩জন বৃদ্ধকে সেখানে তালাবদ্ধ রাখা হয়েছিলো জানা ছিলো না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাদের তালামুক্ত করে দেওয়া হয়।
এএজে
