এবার চেয়ারম্যান হতে মরিয়া সেই ফারুক—জনমনে আতঙ্ক

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ইব্রাহিম ফারুক বাউফল পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে সম্প্রতি ভোটার পরিবর্তন করে নাজিরপুর ইউনিয়নে নেওয়ায় ওই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তিনি নাকি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আসন্ন ২৭ জুলাই নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন এমনটাই প্রচার করছেন তাঁর সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। ফারুক মনোনয়ন পেলে নাজিরপুর ইউনিয়নের শান্ত পরিবেশ আবার অশান্ত হয়ে উঠবে এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ভোটারেরা।

ডিগবাজ নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি।

কে এই ফারুক?
স্থানীয় বিএনপি ও জাতীয়পার্টির অনেক নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে,১৯৮২ সালের ১০ মার্চ বাউফল ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি ছাত্রদলের ব্যানারে জিএস নির্বাচিত হন। ওই প্যানেল থেকে তাঁরই আপন বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান ওরফে বাচ্চু  ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভোল পাল্টে ফারুক এরশাদের জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে ১৯৮৯ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি হন। পরবর্তীতে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যান। ১৯৯২ সালে যুবদলের আহ্বায়ক হন। ১৯৯৩ সালে উপজেলা বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক ছিলেন ইব্রাহিম ফারুক।

ফারুকের বড় ভাই হাফিজুর রহমান ওরফে বাচ্চু  ছিলেন জাগো দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিএনপি করার অভিযোগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাসস থেকে হাফিজুরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।

জাতীয়পার্টি ও বিএনপি করার সময় তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ফারুকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

তবে তাঁর আরেক বড় ভাই ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ইব্রাহিম সেলিম ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এরশাদ সরকারের সময় সেলিমকে ট্রাক চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়। ওই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা  শেখ হাসিনা শহীদ ইব্রাহিম সেলিমের কবর জিয়ারত করতে এসেছিলেন বাউফলে। তখন এরশাদের দল করার কারণে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করনেনি ইব্রাহিম ফারুক। যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতারা ও ইব্রাহিম সেলিমের স্ত্রী নাছিমা জাহান জেসমিন।

সেই ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে ডিগবাজ ফারুক আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন। অনেক ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অথচ শহীদ ইব্রাহিম সেলিমের একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান ইব্রাহিম ওরফে ডরোথির ঠাই হয়নি তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তিতে। ইব্রাহিম ফারুক ও তাঁর ভাই হাফিজুরের বিশাল অট্রালিকা থাকলেও ঘর উঠানোর মত জায়গা রাখা হয়নি ডরোথির জন্য। এ সংক্রান্ত ডরোথির আর্তনাথের ভিডিও অনেকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মো. জসিম উদ্দিন ফরাজি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ওয়াদুদ মিয়ার ওষুধের দোকানে হামলা চালানো হয়েছিল এই ইব্রাহিম ফারুকের নেতৃত্বে। দোকানের ওষুধ ও আসবাব ভেঙে ফেলা হয়। তখন আমি ওই দোকানে বসে ওয়াদুদ মিয়ার সঙ্গে দলীয় বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। দুঃখ হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনকারী এখন আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা। তাঁরাও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন,‘বিএনপি ও জাতীয়পার্টিতে থাকার সময়ও মারামারি ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতেন ফারুক। এখনও সেই কাজ করছেন তিনি। আর তাঁর কারণেই দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। বিএনপি ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় আমাদের নেতা-কর্মীরা যাঁর হাতে মার খেয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন এবং দলীয় মনোনয়ন চান।’ তিনি আরও বলেন,তাঁর ভাই ইব্রাহিম সেলিম স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত হওয়ার সময় স্বৈচারচার এরশাদ সরকারের পক্ষে মিছিল-সমাবেশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিতেন ফারুক। যা সবার-ই জানা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮২ বছরের এক বৃদ্ধা নারী বলেন,‘বাবারে হুনছি ওই জুলুমকারী জালেমডায় বলে নৌকা পাইবো। তাহলেতো এলাকার মানুষ সুস্থে থাকতে পারবো না। হে আল্লাহ, তুমি জালেমের (ফারুক) হাত থেকে নাজিরপুরবাসিরে বাঁচাও।’

এ বিষয়ে ইব্রাহিম ফারুক বরাবরই বলে আসছেন,‘তিনি বহু বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। সেই থেকে আওয়ামী লীগেই আছেন এবং থাকবেন।’ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য না।