ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

কুষ্টিয়ার গ্রামঅঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরিবের ‘মাটির ঘর’

কুষ্টিয়ার গ্রামঅঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরিবের ‘মাটির ঘর’
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির দেয়াল ও খড়ের ছাউনির তৈরি ঘর। অথচ এক সময় কুষ্টিয়া গ্রামঅঞ্চলে বাংলার ঐতিহ্য বহন করত মাটির দেয়াল ও খড়ের ছাউনির গরিবের এসি মাটির ঘরগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় খড়ের তৈরি ঘর চোখে তেমন একটা পড়ে না বললেই চলে।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যেখানে প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়তো প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাটির দেয়াল বিশিষ্ট খড়ের ছাউনির তৈরি ঘর। অথচ ইদানিং উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরেও সেই মাটির দেয়াল বিশিষ্ট খড়ের তৈরি ঘর তেমনটা আর চোখে পড়েনা। মাটির দেয়াল ও খড়ের ছাউনির কাজে নিয়োজিতদের অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের পেশা পরিবর্তন করে নিয়েছেন। 
উপজেলার অনেক  ঘরামিরা  জানান, আগেকার দিনের মাটির তৈরি দেয়াল ও খড়ের ছাউনির তৈরি ঘরের জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে ইট, বালি, সিমেন্ট, লোহার রড, টিন ও কংক্রিটের ব্লকের তৈরি বড় বড় বিল্ডিং-অট্টালিকা। বিল্ডিং তৈরিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তারাও কর্ম হারিয়েছেন। ফলে মাটির দেয়াল বিশিষ্ট খড়ের ছাউনির ঘর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় তিনিও পেশা পরিবর্তন করে টিনের ছাউনির কাজ বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন সংসারটাকে একটু সুখে রাখতে।

খোকসা উপজেলার  সমাজসেবক হাসু জানান, ৩০-৩৫ বছর  আগে তার বাড়িটি ছিল মাটির দেওয়াল বিশিষ্ট দুই চালা খড়ের ছাউনির ঘর। শুধু তাই নয় পাশে অনেকেই ছিল খড়ের ছাউনির ঘর। বাড়ির সামনে ছিল বড়োসড়ো একটি বৈঠক খানা। সেখানে স্থানীয় বিরোধপূর্ণ সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা হতো। মাটির দেয়াল বিশিষ্ট ঘরের খড়ের ছাউনি থাকার ফলে গরমের সময় ঠান্ডা ও ঠান্ডার সময় গরম অনুভূত হতো। ওই জায়গাটি দখল করেছে এসি নামের একটি বৈদ্যুতিক মেশিন। সেই সময় ঘরের চালের ছাউনির উপর নির্ভর করেও অনেকের ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করা হতো। অথচ ইট, বালি, লোহার রড ও সিমেন্ট, ও বর্তমানে অত্যাধুনিক কংক্রিট ব্লকের ভিড়ে মাটির দেয়াল ও খড়ের ছাউনির ঘর তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। 

কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার আমানতপুর গ্রামের মৃত নাদের মালিথা ছেলে আলেফ ফকির (৬৫) বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে মাটির দেয়াল বিশিষ্ট খড়ের ছাউনির একটি ঘর। আলেফ ফকির জানান, তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ও সাধু তন্ত্রের মানুষ। সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে বাড়তি অর্থ গচ্ছিত সম্ভব হয়নি। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। গ্রামের অন্য সকলে বাড়ি ঘরের চেহারা পরিবর্তন করলেও অর্থের অভাবে তিনি রয়ে গেছেন সেই পুরানো ঐতিহ্যে। প্রতি ২/৩ বছরে একবার খড় পরিবর্তন করতে হয়। এ ধরনের খড়ের ছাউনি কাজে নিয়োজিত অনেকেই পেশা পরিবর্তন করার ফলে খড়ের ছাউনি করাতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আমানতপুর গ্রামের মৃত ভাসা মালিথার ছেলে রিয়াজ মালিথা বলেন, আমি প্রায় ৪৫ বছর আগে থেকেই মাটির ঘরে বসবাস করে আসছি। বাবা-মার হাতে গড়া এই গরিবের এসি মাটির ঘর। আমি পেশায় একজন চা বিক্রেতা।
পূর্বের তুলনায় মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে জীবন যাত্রার মানের ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর তাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালিদের চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাটির দেয়াল বিশিষ্ট খড়ের ছাউনি ঘরের চিহ্নটি। হয়তো সেই দিন আর বেশি দুরে নয়, খড়ের ছাউনির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজম্ম রূপকথার গল্পে এই ঘরকে স্থান দিতে স্বাছন্দবোধ করবে।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন