বিয়েতে ছেলের খালার আপত্তি, চলেই গেলেন সেই তামান্না
-18_June.jpg)

দেড় বছর ভালো বেশে সুজন ও তামান্নার বিয়ের দিনখন ঠিকের পর মেয়ের পরিবার দরিদ্র মা বিদেশে থাকে তাই ছেলের খালার আপত্তিতে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় অভিমান করে বিষ পানের ৬ দিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরে অবশেষে মারা গেলেন তানান্না (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামে। তামান্না ওই গ্রামের বাচ্চু মোল্লার একমাত্র মেয়ে।
তামান্নর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের বাচ্চু মোল্লার কলেজ পড়–য়া মেয়ে তামান্না (১৭) সাথে আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের মেখলেছুর রহমানের ছেলে সুজন হাওলাদারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সুজন পেশায় একজন ফল ব্যবসায়ী। আমতলী হাসপাতালে সড়কে তার খালু কালাম মুছল্লীর সাথে রয়েছে যৌথ ফলের আড়ৎ। দোকানে থাকার সুবাদেই তামান্নার সাথে সুজনের গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।
তামান্নার বাবা পেশায় একজন কৃষক। মা নেহার বেগম সৌদি প্রবাসী। সুজনের মা নেই। তাই খালা খালু তার অভিভাবক। সুজন এবং তামান্নার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে দুই পরিবারের সিধান্ত মতে ১০ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়ের বাড়িতে বসে বিয়ে সম্পন্নের দিনক্ষন নির্ধারন হয়।
এর মধ্যে ছেলে সুজনের খালা মাহফুজা বেগম জানতে পারেন তান্নানার পরিবার দরিদ্র এবং মা নেহার বেগমে সৌদি প্রবাসী। এই অজুহাতে সুজনের খালা মাহফুজা বেগম এ বিয়েতে বাঁধ সাধেন। এবং কোন অবস্থাতেই সে তার বোনের ছেলে সুজনের সাথে তামান্নার বিয়ে দিতে রাজি নয়। সুজনের খালার কারনে ভেঙ্গে জায় বিয়ে।
এ খবর তামান্নার নিকট পৌছানোর পর সে দুই দিন ধরে খাওয়া বন্ধ করে দেন। সুজন তখন প্রেমিক তামান্নাকে বিয়ের সকল ব্যবস্থা করবেন বলে অম্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি সুজন।
এখবর তামান্নার নিকট পৌছা মাত্র সোমবার সকাল ৮টায় ঘরে থাকা পোকা মারার বিষ পান করে তামান্না। বিষ পানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তাৎক্ষনিক স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার অবস্থা সংকটপন্ন হলে ওই দিন দুপুরেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয় তামান্নাকে। সেখানে ৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরে শনিবার সকাল ৮টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন তামান্না। তামান্নার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
তামান্নার বাবা বাচ্চু মোল্লা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মোর মাইয়াডারে বিয়ার আশ্বাস দিয়া সব শ্যাস কইর্যা দিছে সুজন। শুক্রবার বিয়ার তারিখ দিয়াও ছেলে সুজনের খালা মাহফুজা বেগম মোরা গরিব বইল্যা এবং মাইয়ার মায় বিদেশে থাহে হেই লইগ্যা বিয়া ভাইঙ্গা দেয়। খবর পাইয়া মোর মাইয়া বিষ খায়।
সুজনের খালা মাহফুজা বেগম জানান, বিয়ার তারিখ অইছিল। মাইয়ার বাবা মা গরিব তাই আমরা বিয়া করাতে রাজি ছিলাম না। মেয়ে কি কারনে বিষ খাইছে হেইয়া আমাগো জানা নাই। সুজনের খালু কালাম মুছল্লী জানান, বিয়ার তারিখ অইছিল। মোগো লগে কথায় মেলে নাই। হেই লইগ্যা বিয়া অয় নাই।
প্রেমিক সুজন বলেন, শুক্রবার বিয়ার তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল। তবে কি কারনে তামান্না বিষ পান করেছে তা আমার জানা নেই।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান বলেন, সুজন এবং তামান্নার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানতে পারি। তাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল।
এর মধ্যে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় তামান্না বিষপান করে চিসিাধীন অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে মারা যায়। সেখানে তার ময়না তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। এবিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএজে
