ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

Motobad news

উধাও হয়ে গেছে সোনাকাটা ইকো ট্যুরিজমের বন্যপ্রাণী!

উধাও হয়ে গেছে সোনাকাটা ইকো ট্যুরিজমের বন্যপ্রাণী!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

রক্ষণাবেক্ষণ ও বন বিভাগের উদাসীনতায় সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র সোনাকাটা ইকো ট্যুরিজম শুধু সৌন্দর্যই হারায়নি, উধাও হয়ে গেছে অধিকাংশ বন্যপ্রাণীও। এতে কেন্দ্রটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণের পরিবর্তে হতাশ করছে। পুরো এলাকায় এখন একপ্রকার ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

মাত্র কয়েক বছর আগেও জনপ্রিয় ছিল পর্যটন কেন্দ্রটি। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা ট্রলার ভাড়া করে ভিড় করতো সোনাকাটায়। কারণ দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র সোনাকাটা ইকো ট্যুরিজম থেকেই দেখা যেত সুন্দরবনের আদলে ম্যানগ্রোভ বন, হরিণ, বানর, কুমিরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সমুদ্র সৈকত।

তবে বর্তমান চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গভীর অরণ্যের নির্জন রাস্তাগুলো যেন আরো নির্জন হয়েছে, পাখির কিচির মিচির ডাকে মুগ্ধ হয়ে পর্যটকরা এগিয়ে গেলেও হতাশ হন বন্যপ্রাণীর বেষ্টনীতে গিয়ে। বেষ্টনীগুলো পড়ে আছে প্রাণী ছাড়াই। হরিণের বেষ্টনীতে দেখা মেলে না একটি হরিণেরও।

সামনে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে মাংসাশী প্রণীর বেষ্টনীর। তবে বেষ্টনীর দেয়ালের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে কখন যে হিংস্র প্রাণীগুলো বেরিয়ে গেছে তার কোনো খোঁজ নেই বন বিভাগের কাছে। মেছোবাঘের বেষ্টনীর দরজাসহ উধাও প্রাণীগুলো। আরেকটু এগিয়ে গেলে দেখা যাবে বন্য শুকরের বেষ্টনী। তবে এ বেষ্টনীর দরজা খোলা দির্ঘদিন ধরে। বেরিয়ে গেছে শুকরগুলোও।


তবে স্বস্তি মিলবে কুমিরের বেষ্টনীতে। দুটি কুমিরে দেখা মিলবে সেখানে। তবে তারাও মৃতপ্রায়।

সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে হেঁটে যাওয়ার রাস্তাগুলোর ইট খসে পড়েছে অধিকাংশ স্থান থেকে। কিছু স্থানে রাস্তার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ছোট ছোট ব্রিজ ও কালভার্ডগুলোতে উঠতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। ক্লান্ত পর্যটকদের বসার বেঞ্চ ও গোলঘরগুলো শুরুর দিকে ভালো থাকলেও এখন আর তার অস্তিত্ব নেই। বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য বসানো ডিপ টিউবয়েলের একটিরও দেখা মিলবে না পুরো বনজুড়ে।

এছাড়াও একাধিক ওয়াশরুম ও রেস্টহাউজ করা হলেও তার তালা খোলা হয়নি বছরের পর বছর ধরে। রেস্টহাউজের ভেতরে একটি বেঞ্চ বাদে কিছুই নেই। সব কিছু উধাও হয়েছে তালাবদ্ধ অবস্থাতেই। ভেতরটা এখন পুরাই ভূতুড়ে।

পাশের জেলা পটুয়াখালীর পাখিমারা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মাহমুদুল হাসান  বলেন, একই স্থান থেকে বন্যপ্রাণী ও সমুদ্র দেখার জন্য এসেছেন তিনি। অথচ বন্যপ্রাণীর বেষ্টনীগুলো খালি দেখে হতাশ হয়েছেন। সমুদ্র পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও রাস্তা ও ব্রিজের খারাপ অবস্থার কারণে ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে।


বরগুনা জেলা শহর থেকে যাওয়া জাহিদুল ইসলাম জানান, কুমির ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনি তার। জঙ্গলটা উপভোগ করেছেন তিনি। তবে সঙ্গে বন্যপ্রাণীগুলো পেলে পূর্ণতা পেতেন।

রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন জানান, সবগুলো বেষ্টনীতে বন্যপ্রাণী আছে এবং নিয়মিত তারা প্রাণীদের খাবার সরবরাহ করেন। ইকো ট্যুরিজমটি সংস্কার করার ব্যাপারে তাদের প্রস্তাবনার কথাও বলেন তিনি।

ফাঁকা বেষ্টনীতে কাদের খাবার দেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনটি হরিন ও দুটি কুমির আছে, তাদেরই খাবার দেওয়া হয়। হরিনগুলো গভীর জঙ্গলে থাকে, তাই দেখা মেলে না। অবশ্য খাবারের বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মোবাইল ফোনে  জানান, কোনো এক ঝড়ে বেষ্টনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেরিয়ে গেছে শুকর ও মাংসাশী প্রাণীগুলো। বাস্তবে দেখা না মিললেও হরিনের বেষ্টনীতে তিনটি হরিণ থাকার কথা দাবি করেন তিনিও। তবে এক সময় প্রায় ২০ থেকে ২৫টি হরিণ ছিল, সেগুলো কিভাবে বেষ্টনীর মধ্যে থেকে উধাও হয়েছে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগটি কেটে দেন।

তাকে আবারো ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো ঝড়ে বেরিয়ে গেছে। আর খাবারের বরাদ্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাবার সরবারহ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন