ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

Motobad news

স্ত্রীকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

স্ত্রীকে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মোবাইল ফোনে কথার সূত্র ধরে পরিচয়। দীর্ঘদিন প্রেমের পরে বিয়ে। তখন বলেছিলেন স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। কিন্তু আমাকে বাড়িতে আনার পরে দেখলার তাঁর প্রথম স্ত্রী আছে। এ নিয়ে প্রায়ই আমার সঙ্গে ঝগড়া হতো। প্রতিদিনই আমাকে মারধর করতো আমার স্বামী। এমনকি কোন কিছুর প্রতিবাদ করলেই সিগারেটের আগুন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্যাঁকা দিতো। হাতুড়ি দিয়েও বেধরক পিটিয়েছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। 

এখন সেখানে এসেও আমাকে হুমকি দিচ্ছে। চিকিৎসাও করাতে দিচ্ছে না। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন স্ত্রী শিউলী বেগম (৪০) এভাবে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিলেন। তাঁর স্বামী মনোয়ার হোসেন উপজেলার নাচনমহল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। ওই ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে সে। স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী। নির্যাতিত শিউলী আক্তার যশোরের চৌগাছার আফরা গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে।

তিনি অভিযোগ করেন, মোবাইল ফোনে কথার সূত্র ধরে মনোয়ারের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে মেয়েকে নিয়ে আফরা গ্রামে বাবার বাড়িতেই থাকতেন তিনি। মনোয়ার তাকে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়ে ২০২১ সালের ১ মে যশোরের একটি কাজী অফিসে পাঁচ লাখ টাকা কবিনে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় মনোয়ার তাকে বলেছিলেন, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। তিনি নলছিটি গ্রামের বাড়িতে একাই থাকেন। বিয়ের পরে নলছিটির নাচনমহল ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে। তিনি বাড়িতে এসে মনোয়ারের প্রথম স্ত্রীকে দেখতে পায়। দুটি বিয়ে নিয়ে দুই স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মনোয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। এমনকি শিউলীর আগের সংসারের মেয়েকেও মারধর ও ধর্ষণ করে। এটা শিউলী দেখতে পেয়ে মেয়েকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় মনোয়ার। কিছুদিন ধরে মনোয়ার শিউলীকে হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেটায়। আঘাতের চিহ্ন তাঁর শরীরে। এতেও থামেনি সে, স্ত্রীর মুখমন্ডলসহ বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুন দিয়ে স্যাঁকা দেয় মনোয়ার। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিউলী। চিকিৎসা নিতে গত ৯ জুন ভর্তি হন নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। 

চিকিৎসাধীন এই নারী ১০ জুন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সঙ্গে দেখা করে স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার তাকে নলছিটি থানায় পাঠিয়ে দেন। নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগ পেয়ে স্বামী-স্ত্রীকে থানায় উপস্থিত হতে নোটিশ করেন।  

এ ব্যাপারে শিউলী আক্তারের স্বামী মনোয়ার হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি তাকে হাসপাতাল থেকে নিতে এসেছি। সিগারেটের আগুনের স্যাঁকা ও হাতুড়ি পেটার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন যাকিছু হয়েছে, এটা আমরা সমাধান করে নিবো।  

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, পুলিশ সুপার স্যার আমার কাছে ওই নারীকে পাঠানো পরে আমি তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলেছি। স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই নোটিশ করেছি। তাদের থানায় ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তাঁরা দুজনে এসে মিলে গেছে বলে বাড়িতে চলে গেছে। 
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন