আদালত প্রাঙ্গনে জালিয়াতি, আইনজীবী সমিতির ভূমিকা দরকার


প্রায় এক বছর আগে বরিশালের একজন যুগ্ন জেলা জজ তার আদালতে জাল নীলামের কাগজ দাখিল করার অপরাধে মামলার বাদীকে ততক্ষন ভাবে দুই বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন। এই রায় আদালত এলাকায় দারুন সাড়া জাগিয়েছিল এবং জাল জালিয়াতি অনেকটাই কমে গিয়েছিল।
কিন্তু কিছুদিন পড়ে সেই বিচারক বদলী হয়ে চলে যান এবং জালিয়াতরা আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর এখন থেকে প্রায় তিন মাম আগে অন্য এক বিচারক ম্যাজিষ্ট্রেট বাকেরগঞ্জ এলাকার এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে একই রকম অপরাধের জন্য সরাসরি জেলে পাঠিয়ে দেন। এই ঘটনার খবর নিতে গেলে সাংবাদিকদের সাথে সংশ্লিষ্ট মহুরিদের সাথে কিছুটা হাতাহাতি হয়।
এ ব্যাপারে বরিশালের আইনজীবী সমিতি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা জানে না কেউ। তবে কিছুদিনের জন্য জালিয়াতরা চুপ করে থাকার পর এখন আবার আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। যার ফলে সাধারণ অসহায় মানুষেরা সর্বশান্ত হয়ে শেষ হবার মুখে এসে দাড়িয়েছে। এসব জালিয়াতদের মধ্যে অতিপরিচিত একটি নাম কারি শাজাহান হাওলাদার। পেশায় সে একজন মহুরি। কিন্তু তাঁর আসল কাজ হচ্ছে জাল নীলাম, জাল ডিক্রি, জাল দলিল ইত্যাদির কাগজ তৈরি করা।
চার বছর আগে ২০১৮ সালে পুলিশ তাকে হাতেনাতে এসব কাগজ সহ গ্রেফতার করেন। কিছুদিন হাজতে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে এসেছে সে। আচর্য্য কথা হলো তার বিচারক বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ২০১৮ সালের ১৩০ নং জি আর মামলা চলমান আছে। কিন্তু চার বছরেও মোকদ্দমার চার্জশিট দাখিল হয়নি। অথচ রাজনৈতিক মামলায় দুই সপ্তাহের মধ্যে চার্জশীট দাখিল হয়। আরো দুংখের কথা হলো এতকিছুর পরেও বরিশাল আইনজীবী সমিতি তাকে বহিস্কার করেনি, বা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বার কাউন্সিলে অনুরোধ পত্র পাঠায়নি। এর ফলে জালিয়াতরা আরো উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। এবং এই অবৈধ ব্যবসা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আদালত এলাকার জালিয়াতরা একটা নিদিষ্ট লক্ষে নিয়ে কাজ করে।
বিভিন্ন এলাকার ভুমি মহুরিদের সাথে কোথাও কোথাও চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে যোগাযোগ করে দূর্বল অসহায় মানুষ এবং নাবালক ও বিধবা মহিলা ও সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি কাগজ পত্র যোগার করে এরপর সেই সম্পত্তির উপর পুরানো ষ্ট্যাম্প রেপ কাগজে জাল নীলাম বা জাল ডিক্রি বসানো বা জাল দলিল তৈরি করে। এরপর নিজস্ব কথিত আইনজীবী দিয়ে রেকর্ড করানোর দরখাস্ত অথবা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বা দেওয়ানি আদালতে মামলা করে। ঐ মামলার বরাত দিয়ে জোর করে সম্পত্তি দখল নিয়ে নেয়। হতভাগ্য সম্পত্তির মালিক কিছুদিন কোর্টে ঘোরাফেরা করে হাল ছেড়ে দিয়ে শেষ হয়ে যায়। অথবা অন্যথ চলে যায়। এভাবেই চলছে এদের ব্যবসা বানিজ্য। কোন বিবেক তাদের কাজ করে না।
এই সিন্ডিকেটের আইনজীবীদের ও সবাই চেনে। এই ভুল কাগজের মামলায় এদের ব্যবসা। এবং এভাবেই এরা ফেপে ফুলে ঊঠেছে। আর এভাবে সমাজ ও দেশে সর্বনাশ করে যাচ্ছে। আইনজীবী সমিতি এ ব্যাপারে বিরাট ভ‚মিকা রাখতে পারেন। সমিতি এসব জালিয়াতদের বহিস্কার করতে পারেন। বার কাউন্সিলে এদের নামে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠাইতে পারেন। এছাড়াও আইনজীবী সমিতি যদি মাননীয় বিচারকদের সাথে দেখা করে জালিয়াতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তাহলে কিন্তু এই ভয়াবহ বানিজ্য একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর সাধারণ মানুষও বেঁচে যেতে পারে। আইনজীবী সমিতির কাছে এটাই মানুষের প্রত্যাশা।
এইচকেআর
