বিদ্যুৎ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ


মো. ছাদেকুল আরেফিন : সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মসংস্থান খাতের সম্প্রসারণ আরও নিশ্চিত করবে বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নিশ্চিত বিদ্যুৎ সরবরাহ সব উৎপাদন, অগ্রগতি সর্বোপরি উন্নয়নের প্রধান উপকরণ। চাহিদামতো বিদ্যুৎপ্রাপ্তি এবং নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে উৎপাদন খাতে (বড়, মাঝারি, ছোট), সেবা খাতসহ সব খাতভিত্তিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন গতিশীল করা সম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন, সঞ্চালন এবং নতুন নতুন সংযুক্তির মধ্য দিয়ে চাহিদামতো বিদ্যুৎপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের কারণে বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন সক্ষমতা এবং বৃদ্ধি-চাহিদা ও প্রাপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। এখন প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং যথাযথ নীতিগ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২০০৯ সালের পর থেকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হয়েছে পাঁচ গুণ। ২৭টির স্থলে বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৪৮টি। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে। এই সময় সঞ্চালন লাইন বেড়েছে ৫ হাজার ২১৩ কিলোমিটার।
বিতরণ লাইন বেড়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার কিলোমিটার। নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোজন দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ গ্রাহককে। এই তথ্য আশাব্যঞ্জক এবং উৎসাহের উদ্দীপক ধরে নিয়ে প্রয়োজন এখন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারে লক্ষদল ভিত্তিক পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক।
এই প্রাসঙ্গিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষিত বেকার যুবসমাজকে লক্ষদল ধরে কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন গুরুত্ববহ। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নিরক্ষর যুবসমাজের আধিক্য দৃশ্যমান।
নিয়মিত পরিসংখ্যান না দিয়েও এটা বলা যায়, দেশে শিক্ষিত বেকারত্ব একটা সামাজিক সমস্যা হিসেবে পরিগণিত। আর এই সামাজিক সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা এখন আলোচনার বিষয়। এই প্রাসঙ্গিকতায় বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের খাতকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া যায়।
কেননা, তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থানের বিষয়টির সঙ্গে নিশ্চিত বিদ্যুৎপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থানের খাতকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা সম্ভব। যেহেতু দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, সেহেতু গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিছুদিন আগেও এ বিষয়টি শুধু বড় বড় শহরকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে তথা অঞ্চলভেদে তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ সম্ভব শুধু শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য।
স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে স্থানীয় যুবসমাজকে লক্ষদল নির্ধারণ করে স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং গুরুত্ববহ। কেননা, স্থানীয় পর্যায়ে যুবসমাজকে যদি স্থানীয় ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে কর্মক্ষেত্রে সংযুক্ত করা যায় তাহলে দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে, আর তা হবে উন্নয়ন অগ্রগতির সারথি। সুতরাং দেশে যেহেতু শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, সেহেতু স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের সর্বোত্তম ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থানের দ্রুত সম্প্রসারণ করা অতীব প্রয়োজন।
এই তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থান একদিকে যেমন বেকার যুবসমাজকে আকৃষ্ট করবে, অন্যদিকে পুরো দেশে ডিজিটাল ব্যাপকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, তথ্যপ্রযুক্তির কর্মসংস্থান খাত প্রয়োগ উপযোগী করতে হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি আশার সঞ্চার করেছে। এই আশার আলোতে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রয়োজন এখন তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ।
শিক্ষিত বেকার যুবসমাজ আর বেকার জনগোষ্ঠীর আধিক্য ধরে নিয়ে গোটা এই বেকার জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু খাতভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি। ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বড় আকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। আর সেই বিদ্যুৎ এখন আমাদের নাগালের মধ্যে। সুতরাং যথাযথ পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম গ্রহণ এখন জরুরি। কেননা, সময় এবং শ্রম সম্পদকে কাজে লাগাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের খাত সৃষ্টি করতে হবে।
এই কর্মসংস্থানে নিয়োজিত শ্রমশক্তিই দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে গতিশীল করবে। সংযুক্ত হবে প্রচুর প্রাণশক্তিসম্পন্ন যুবসমাজের অপার শ্রমশক্তি, যা উন্নয়নের চাবিকাঠি। শতভাগ বিদ্যুতায়নের আশীর্বাদ এবং চাহিদামতো বিদ্যুৎপ্রাপ্তি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মসংস্থানসহ নানামুখী উৎপাদন খাত, সেবা খাত, শিল্প খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে শুধু শিক্ষিত বেকার যুবসমাজই নয়; বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে এবং দেশের উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবে।
অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন: উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
