যাদের হাত ধরে এ দেশে ব্যান্ড সংগীত শুরু


বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের তারুণ্যের উদ্দীপনার কেন্দ্রস্থল ব্যান্ড সংগীত। সংগীতের ইতিহাসে অপেক্ষাকৃত এই নতুন সংযোজনকে অনেক সময় অপসংস্কৃতি বলেও চিহ্নিত করা হয়। তবে সব পেরিয়ে তারুণ্যের কাছে ব্যান্ড কালচার নিজস্ব আসন তৈরি করে নিয়েছে।
আমাদের দেশে ব্যান্ড সংগীত এই পর্যায়ে এসেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করে। চলুন আজ জেনে নেই দেশে ব্যান্ড সংগীতের শুরুর দিকের কিছু কথা।
আমাদের দেশে ব্যান্ড সংগীতের শুরুটা হয়েছিল সেন্ট গ্রেগরির এক স্কুল বালকের হাত ধরে। নাম ফজলে রব। ১৯৬৩ সালের ১৮ মার্চ তার মনে এক নতুন স্বপ্নের জন্ম নেয়। স্বপ্নটা ছিল গিটার শেখার আর দলবেঁধে গান করার। এই স্বপ্নের জন্ম হয়েছিল স্কুলের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ক্লাস এইট পড়ুয়া টেলফার জনসন নামের এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ছাত্রের গিটারের জাদুতে মুদ্ধ হয়ে।
অনবদ্য গিটার প্লেয়িংয়ে টেলফার গাচ্ছিলেন বিটলস-পূর্ব সময়ের ব্যান্ড মিউজিক শাসন করা ‘দি শ্যাডো’ এর জনপ্রিয় আর্টিস্ট ক্লিফ রিচার্ডের একটি জনপ্রিয় গান।
রবের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল তিনশত টাকা দিয়ে কেনা একটি ইলেকট্রিক গিটার আর এ্যাম্প। এবারে দলবেঁধে গাইবার পালা।
পরের বছর রবের সঙ্গী হলেন গিটার বাজিয়ে রফিক মাযহার ইসলাম সাজু নামের আরেক স্কুলপড়ুয়া স্বপ্নবাজ। তারপর সুফি রশিদ নামের আরেকজন তাদের দলে ভিড়লেন, তখনো কিন্তু তারা ব্যান্ড গঠন করতে পারেননি। এই তিনজন মিলে স্কুল, কলেজ, পাড়া-মহল্লায় গান গাইতে শুরু করলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুফি সঙ্গ ত্যাগ করলে রফিক রিদম গিটার বাজানো শুরু করেন।
ঢাকার বিখ্যাত নবাব বাড়ির ছেলে খাঁজা সাব্বির কাদের ড্রামসেট নিয়ে ঢুকে গেলেন এই চক্রে। অবশেষে ১৯৬৪ সালে ব্যান্ড গঠন হয়, নাম রাখা হয় ‘আইওলাইটস (Iolites)’।
তখন পর্যন্ত তাদের দলে কোনো ভোকালিস্ট ছিল না। এরপর আলমগীর হক নামে এক ছেলেকে পাওয়া গেল। এই সেই আলমগীর হক যিনি আশির দশক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের একজন, উর্দু পপস্টার, অনেকে যাকে প্রাচ্যের ‘এলভিস প্রিসলি’ বলে ডাকেন।
কোক স্টুডিওতে তার গাওয়া বাংলা-উর্দুর মিশেলে ‘আমায় ভাসাইলি রে’ গানটা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে গান গাইতেও এসেছেন। আলমগীর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬-৬৭ সাল পর্যন্ত এই ব্যান্ডে ছিলেন। এরপর বড় গায়ক হবার স্বপ্ন নিয়ে করাচি চলে যান।
এসএম
