আমতলীসহ উপকূলে চলছে হালখাতার প্রস্তুতি


মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রচলন করেন হালখাতার। বৈশাখের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীদের দেনা পাওনা চুকিয়ে লাল খাতা বা নতুন খাতায় নাম লিখে ক্রেতারা। চলে পুরো মাস ধরে গান বাজনা ও মন্ডা মিঠাই এর আনন্দ উৎসব। এ দিনটি বাঙালী জাতিকে মনে করিয়ে দেয় বঙ্গাব্দ সালকে। সনাতন ধর্মাবলম্বি ব্যাবসায়ীরা গনেষ পূজার মাধ্যমে দিনটি শুরু করেন। অন্যান্য ধর্মবলম্বিরাও তাদের ধর্মীয় মতে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন একসাথে।
আমতলী পৌরশহর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ধোয়া মোছার কাজ চলছে। পুস্তক বিক্রেতা দোকান গুলোতে লাল খাতা ও কার্ডে পরিপূর্ন। ঘরের রমনীরা নানান পিঠা মন্ডা তৈরীর কাজে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা নানান ডিজাইনের কার্ড পাঠিয়েছেন ক্রেতাদের কাছে।
জাহিদ বুক হাউসের মালিক মো. জাহিদ বলেন, এ বছর হালখাতার খাতা ও কার্ড বিক্রি তেমন হয়নি। মুদী মনোহরদি ব্যবসায়ী মাখন রিপন চন্দ্র বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেছি। এনেছি নতুন লাল খাতা, সকল ক্রেতাদের দাওয়াত কার্ড বিতরণ করেছি। সকলের আর্শ্বিবাদ ও আমার দোকানে পদধুলি কামনা করছি।
আর কয়েক দিন পরেই বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ । পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের হালখাতা চলবে আমতলী পৌরশহরসহ গ্রামের ব্যবসায়ীদের। চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যেই ক্রেতাদের কাছে পৌছে গেছে নিমন্ত্রণপত্র। আর ক্রেতারাও পুরাতন খাতা থেকে নাম বাদ দিয়ে হালখাতায় অংশ নিবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ ছোট বড় ব্যবসায়ী পুরাতন আবর্জনাকে ঝেরে ফেলে নতুন করে সাজিয়ে তুলছে দোকান।
পাশাপাশি পুরাতন খাতার ক্রেতার সাথে দেখা হলে চলছে হাসিমুখে কুশল বিনিময় । যদি ও নিমন্ত্রণপত্রের এক কোনায় লেখা থাকে আপনার বকেয়া টাকার পরিমান। ক্রেতাদের ও একান্ত ভাবনা হালখাতায় অংশ নিতেই হবে। হাজার বছর ধরে বাঙালির ঐতিহ্য ব্যবসায়ীরা ও দোকানকে এ দিন সাজিয়ে তুলে রঙিন কাগজ আর আলোকসজ্জায় । আমন্ত্রিতদের বসার জন্য আলাদা স্থান রাখা হয়েছে । মিষ্টিমুখ করার জন্য রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। সাউন্ড বক্সে বাজাতে থাকবে বৈশাখীসহ গ্রামবাংলার গান আনন্দমুখর পরিবেশে ক্রেতারা সাধ্যমত বকেয়ে পরিশোধ করে নিজের নাম লিখিয়ে যান সেই ঐতিহ্যবাহী হালখাতার খাতায় ।
আমতলী নুতন বাজারে মুদিমনোহরী ব্যবসায়ী মো. নয়ন নামক এক ব্যবসায়ী জানান অনেক ক্রেতা রয়েছে যারা সারা বছর নগদ বকেয়ার লেনদেন করেন । বছর শেষে হালখাতা অনুষ্ঠানে পুরাতন সকল বকেয়া শোধ করেন । হালখাতা তোলা হয় তাদরে নাম । আবার নতুন করে শুরু হয় ব্যবসায়ীক লেনদেন। হালখাতায় আমন্ত্রিত ক্রেতা এস এম নিজাম উদ্দিন জানান, প্রশান্তি রয়েছে । তবে অনেক সময় সাধ্য স্বাদকে হার মানায়। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে চলছে আসন্ন হালখাতায় নিয়ে নানা জল্পনা -কল্পনা এবং হিসাব নিকাশ।
এইচকেআর
