১২ কাভার্ড ট্যাংক চার দিন আটকা


ভোলা থেকে অস্ত্রধারীদের পাহারায় মজুত গ্যাস সিএনজি করে রাতে ঢাকায় আনতে গিয়ে ফের তোপের মুখে পড়েছেন ইন্ট্রাকো ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তারা। ওই কোম্পানির ২৫ লাখ ঘনফুট গ্যাস ভর্তি ১২টি কাভার্ড সিলিন্ডার ট্যাংক ৪ দিন ধরে শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও ইলিশা সড়কে আটকে রাখা হয়েছে।
আমরা ভোলাবাসী সংগঠনের ব্যানারে গ্যাস আটকে দেওয়া হয়। শুক্রবার অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন শাহিন জানান, ইন্ট্রাকো কোম্পানির পক্ষ থেকে গাড়ি চাপা দিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যার ভয় দেখানোর অভিযোগে থানায় জিডি করা হয়েছে। অন্দোলন সংগঠনের সদস্য সচিব মোশারেফ অমি জিডি করেন।
জেলায় আবাসিক সংযোগ, মেডিকেল কলেজ, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ, শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাসহ ৬ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত স্থানীয় মজুত গ্যাস অন্যত্র নিতে দেওয়া হবে না-এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৪ মে ইন্ট্রাকো স্টেশনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনের নেতারা। শুক্রবার ইন্ট্রাকোর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্বাস আলী যুগান্তরকে জানান, সরকার এ জেলায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৫ জুন ঢাকার ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ ভোলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় ভোলার গ্যাস ঢাকায় নেওয়ার দাবি জানানো হয়। ৮টি শিল্প গ্রুপ ভোলাতে প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব দেন। ওই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ১ জুলাই মঙ্গলবার রাতে একযোগে গ্যাস নিয়ে ১২টি কাভার্ড সিলিন্ডার ট্যাংক ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। শহর অতিক্রমের সময় তা আটকে দেওয়া হয়।
আমরা ভোলাবাসী সংগঠনের অন্যতম সংগঠক মেহেদী হাসান জানান, কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়া ওই কোম্পানি ১০০ জন অস্ত্রধারী বাহিনীর পাহারায় (৩টি মাইক্রোবাস, বেশ কিছু মোটরসাইকেলযোগে) ওই ১২টি ট্যাংকার নিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে আন্দোলনের কয়েকজন পথ আটকে দিলে ওরা অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখায়। বিষয়টি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ তাদের ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে কোম্পানির জিএমসহ স্টাফরা পালিয়ে যান। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই কোম্পানিকে আর ভোলা থেকে গ্যাস নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন আন্দোলনের নেতারা।
আন্দোলন সংগঠনের সভাপতি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর জানান, আমাদের দাবি সামান্য। দাবির প্রতি সম্মান না দেখিয়ে ওই কোস্পানি এভাবে রাতে গ্যাস পাচার করবে, তা কেউ মানতে পারবে না। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাসের প্রয়োজন এটা আমরা উপলব্ধি করি। জেলার চাহিদা পূরণের পর অবশিষ্ট গ্যাস নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই।
কোম্পানির ম্যানেজার জানান, ইন্ট্রাকো ফিলিং স্টেশনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় প্রতিদিন কোটি টাকার গ্যাস ঢাকায় আসছে না। ওই গ্যাস দিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১২টি কারখানা চলছিল। এপ্রিল মাস থেকে গ্যাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে। মাঝে ১০ দিন কেবল গ্যাস আনা গেছে। এরপর ফের ২৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে।
ভোলায় অবস্থিত সুন্দরবন গ্যাস সরবরাহ কোম্পানির ম্যানেজার প্রকৌশলী ওলিউর রহমান জানান, ভোলায় বর্তমানে প্রতিদিন ১২০ মিলিয়ন গ্যাস অলস পড়ে থাকে। শহর এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পায়ন গড়ে উঠলে গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। বাপেক্স ভূতাত্ত্বিক গবেষকদের মতে ভোলায় ৫ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের মজুত রয়েছে। এই বিপুল সম্পদের বিনিময়ে ভোলাবাসীর প্রধান তিনটি দাবি আবাসিক সংযোগ, একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ। এ দাবি মানার শর্তে ভোলার গ্যাস জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান দক্ষিণাঞ্চল গ্যাস আন্দোলন নাগরিক কমিটির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী।
এইচকেআর
