আটককাণ্ডের জেরে তিন জেলায় হেফাজতের তাণ্ডব

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে নারীসহ হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ঘটনার জের ধরে তিন জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। তাঁরা কক্সবাজারের মহেশখালীতে উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়, মহেশখালী থানা, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দোকানপাট, হিন্দুদের বাড়িসহ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। শনিবার রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এ তাণ্ডব চলে। রাতের তাণ্ডবের পর থেকে পুরো দ্বীপে ‘হুজুরদের লাঠি’ আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মহেশখালী উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি তারেক জুশেলকে আটক করা হয়েছে। থানায় দুটি মামলা করেছে পুলিশ।
এদিকে শনিবার রাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালান। তাঁরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, পুলিশ বক্স ও যানবাহনে ভাঙচুর এবং আগুন দেন। এ ঘটনায় গজারিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো এক থেকে দেড় শ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। অন্যদিকে সুনামগঞ্জের ছাতক থানা ও পৌর শহরে হামলা ও তাণ্ডবের ঘটনা ঘটান হেফাজতকর্মীরা। শনিবার রাত ৯টার পর হেফাজত নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাতক থানায় হামলায় চালান। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তাঁরা শহরে এসে কয়েকটি দোকানপাটও ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে ছাতক থানায় ৯৪ জন হেফাজত নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৯০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সোনারগাঁয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে ‘আটকে’র ঘটনাকে ইস্যু করে সন্ধ্যার পর থেকে মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার মাদরাসাগুলো থেকে লাটিসোঁটা নিয়ে শত শত ছাত্র-শিক্ষক বেরিয়ে পড়েন। তাঁদের হাতে লাঠি ছাড়াও দা, খন্তা ও বন্দুকও দেখা গেছে। দ্বীপের কালারমারছড়া, বড় মহেশখালী, শাপলাপুর এবং হোয়ানক ইউনিয়ন থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারী বের হয়ে তাণ্ডব চালায়। বিক্ষোভকারীরা মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে লাঠিসোঁটা ও ইট মেরে জানালা ভাঙচুর করে। এরপর তারা থানায় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ব্যাপক ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুরসহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দ্বীপের গোরকঘাটা হিন্দুপল্লীতেও হামলা চালিয়েছে তারা।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, ‘হামলাকারীরা দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে হামলার ঘটনায় থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, দ্বীপে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করা হবে।
এদিকে গজারিয়া থানার এসআই জামাল উদ্দিন জানান, শনিবার রাতে হামলার ঘটনায় গতকাল সকালে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ দেড় শ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, পুলিশ বক্স ও যানবাহনে ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার অভিযোগে এই মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মামুনুল হককে আটকের খবরে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই থেকে তিন শ হেফাজত সমর্থক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের জামালদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা জামালদি হাইওয়ে পুলিশ বক্স, কয়েকটি দোকান ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর পুলিশ হেফাজতকর্মীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে ছাতকের পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে হেফাজতের কর্মীরা থানার গোলঘরে প্রবেশ করে ভাঙচুরসহ থানার মূলঘর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরে তাঁরা পৌর শহরের কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর চালান। এতে সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর পৌর শহরে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ছাতক থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, দোষীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। পাশাপাশি শহরে টহল জোরদার করা হয়েছে।
এমবি
