ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

এ দিনে জন্মেছিলেন জীবনানন্দ দাশ

এ দিনে জন্মেছিলেন জীবনানন্দ দাশ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

তিনি আমাদেরে বলতে শিখিয়েছেন-
‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।’

সেই কবি জীবনানন্দ দাশ। যিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন আজ। ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা কুসুমকুমারী দাশ সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে কবিতা লিখতেন। এই মায়ের কাছ থেকেই সাহিত্যচর্চা ও কবিতা লেখার প্রেরণা পান জীবনানন্দ। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জীবনানন্দ ছিলেন সবার বড়। তার ডাকনাম ছিল মিলু।

১৯০৮ সালের জানুয়ারিতে আট বছরের মিলুকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স এবং এর দুই বছর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি আইন নিয়ে পড়ালেখা শুরু করলেও তা শেষ করেননি।
জীবনানন্দ দাশের ৫৬ বসন্তের জীবনটি কেটেছে চরম দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পেশা মূলত শিক্ষকতা হলেও কর্মজীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কোথাও থিতু হতে পারেননি। তিনি অধ্যাপনা করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ- ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা ও বেলা অবেলা কালবেলা। তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় মাল্যবান ও সতীর্থ উপন্যাস।

জীবনানন্দ দাশ তার জীবদ্দশায় ৮৫০টি কবিতা লিখলেও মাত্র ২৬২টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও কাব্যসংকলনে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। এমনকি রূপসী বাংলার সম্পূর্ণ প্রস্তুত পাণ্ডুলিপি তোড়ঙ্গে মজুদ থাকলেও তা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি জীবনানন্দ দাশ। তবে তিনি এ কাব্যগ্রন্থটির নাম দিয়েছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা যা তার মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত এবং রূপসী বাংলা প্রচ্ছদনামে প্রকাশিত হয়। আরেকটি পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয় মৃত্যু পরবর্তীকালে যা বেলা অবেলা কালবেলা নামে প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় তার একমাত্র পরিচয় ছিল কবি। অর্থের প্রয়োজনে তিনি কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন ও প্রকাশ করেছিলেন। তবে নিভৃতে গল্প এবং উপন্যাস লিখেছিলেন প্রচুর যার একটিও প্রকাশের ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া ষাট-পয়ষট্টিরও বেশি খাতায় ‘লিটেরেরী নোটস’ লিখেছিলেন যার অধিকাংশই প্রকাশিত হয়নি।

নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন ১৯৫২ সালে পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণ বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থটি বাংলা ১৩৫৯-এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বিবেচনায় পুরস্কৃত করা হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ খৃস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) সাহিত্য পুরস্কার লাভ করে।

১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন কবি জীবনানন্দ। এর ছয় দিন পর স্থানীয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে পরলোকগমন করেন তিনি।

কবিকে আজও বাঙালি স্মরণ করে ক্ষণে ক্ষণে, যখনই মনে পড়ে, কবির লেখা বনলতা সেনের সেই লেখা....

হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন