বিদায়ের পথে মাহে রমজান


আজ ১৪৪২ হিজরির ২১ রমজানুল মোবারক। আমাদের কাছ থেকে চোখের পলকের মতো বিদায় নিয়েছে রহমত ও মাগফেরাতের ২০টি দিবস। এখন চলছে দোজখ থেকে মুক্তি বা নাজাতের পালা। রহমত ও মাগফেরাতের চাদরে যখন আচ্ছাদিত, তখন আল্লাহপাকের কাছে আমরা আশাবাদী, পবিত্র রমজানুল করিমের পূর্ণাঙ্গ ইবাদত দ্বারা আমরা দোজখের আগুনকে দূরে রাখব ইনশাআল্লাহ।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) বলেন, যখন রমজান শরিফের শেষ দশক উপস্থিত হতো, তখন নবি করিম (স.) লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন। অর্থাৎ রাত্রি জাগতেন এবং পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে তুলতেন। (বুখারি শরিফ-১৯২০, মুসলিম শরিফ-১১৭৪) নবি করিম (স.) আরো বলেন, রমজানের শেষ দশকে এমন মুজাহাদা করতেন, যা তিনি অন্য সময় করতেন না। (মুসলিম শরিফ-১১৭৫) পবিত্র রামজানুল করিমের এই শেষ দশকে আমরা বেশি বেশি করে মহান আল্লাহপাকের কাছে দোজখ থেকে পানাহ চাইব এবং বেহেশত পাওয়ার আশা করব।
হজরত উম্মে ইসমত (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) ইরশাদ করেন, রমজানের শেষ দশকে আল্লাহপাক রব্বুল আলামিন অসংখ্য গুনাহগারকে দোজখের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দান করেন। দোজখ থেকে সেই মুক্তির জন্য আমরা মহান রব্বুল আলামিনের কাছে প্রতিনিয়ত বেশি বেশি তওবা ও ইসতেগফার করব, আল্লাহপাক আমাদের দোজখের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দান করুন।
হজরত উম্মে ইসমত থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) ইরশাদ করেন, কোনো মুসলমান যখনই কোনো পাপ করে, তখন যে ফেরেশতা তা লেখার কাজে নিয়োজিত থাকেন, তিনি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। যদি সে এর মধ্যে ইস্তেগফার করে, তাহলে এই পাপ তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করেন না এবং তার জন্য আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেবেন না। (মুস্তাদারাকে হাকিম)
যার আমলনামায় বেশি ইস্তেগফার থাকবে, সে কামিয়াব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) বলেন, সেই ব্যক্তির অবস্থা অতি উত্তম, কেয়ামতের দিন যার আমলনামায় প্রচুর পরিমাণে ইস্তেগফারের আমল লেখা থাকবে। (ইবনে মাজাহ)
মহান রব্বুল আলামিন আমাদের ওপর কত না মেহেরবান, প্রথম রমজান থেকে শুরু করে আজ ২২ রমজান চলে যাচ্ছে। এটাই প্রমাণিত হয়, আল্লাহপাক আমাদের ওপর কতই না দয়ালু এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন।
হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (স.) বলেন, শয়তান বলেছিল, হে আমার প্রভু, তোমার সম্মানের শপথ। আমি তোমার বান্দাদের বিপথগামী করতেই থাকব, যতক্ষণ তাদের রুহ শরীরে বিদ্যমান থাকে। তখন আল্লাহ বলেছিলেন, আমি আমার সম্মান, পরাক্রম ও উচ্চ মর্যাদার শপথ করে বলছি, আমি তাদের ক্ষমা করতেই থাকব, যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবে। (আহমদ)
হজরত ছাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম (স.) নামাজ থেকে অবসর হয়ে তিন বার ইস্তেগফার করতেন এবং এভাবে দোয়া করতেন। আল্লাহুম্মা আন্তাস্সালাম ওয়ামিনকাস্সালাম তাবারাক্তা ইয়া যালযালালি ওয়াল ইক্রাম। অর্থাৎ, হে আল্লাহ তুমি শান্তিময়। তোমার থেকেই শান্তি লাভ হয়। তুমি বরকতময়। হে পরাক্রম ও সম্মানের অধিপতি। (মুসলিম শরিফ) রমজানের শেষ দশকে প্রত্যেক মুমিন এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করব ইনশাআল্লাহ—আল্লাহুম্মা আজিরনা ওয়া খালিছনা মিনান্নার।
এমইউআর
