ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

কবে শেষ হবে শ্রমিক আন্দোলন?

কবে শেষ হবে শ্রমিক আন্দোলন?
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ফারহানা ইয়াসমিন:
সাধারণত পৃথিবীতে ন্যায্য দাবি, অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টার নামই হলো আন্দোলন। আর  যখন শ্রমিক শ্রেণিকে কেন্দ্র করে সেই আন্দোলন ঘটে থাকে তখন সেটাকে আমরা শ্রমিক আন্দোলন বলি। এটি হলো শ্রমিক আন্দোলনের সহজ এবং অতি সাধারণ  একটি সংজ্ঞা। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ অর্থে এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে এক মহাকাশ পটভূমি। আমরা জানি, প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স তার থিওরিতে বলেছিলেন সমাজে দুই ধরনের শ্রেণি রয়েছে। এক, বুর্জোয়া (মালিক শ্রেণি), দ্বিতীয়, প্রলেতারিয়েত (শ্রমিক শ্রেণি)। এবং এই দুই শ্রেণির মধ্যে সম্পর্ক হলো দ্ব›দ্বমূলক। তার এই থিওরির উপর ভিত্তি করেই জন্ম হয়েছে শ্রমিক আন্দোলন। যেমন মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে তখনই দ্ব›দ্বমূলক সম্পর্কের সৃষ্টি হচ্ছে যখন মালিক শ্রেণি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনসহ ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত করছে। ঠিক এরকম কিছু ঘটনার রেশ ধরেই শ্রমিকেরা প্রথম আন্দোলন শুরু করে।

১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে দৈনিক আটঘন্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকেরা জামায়েত হয়। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে পুলিশ ও শ্রমিকের মধ্যে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে করে ১০-১২ জন পুলিশ ও শ্রমিক নিহত হন। ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এর প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ সালের মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘন্টা কাজ করার  দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে  মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অনেক দেশে শ্রমিকেরা  মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকরী হয়। এভাবে করে শেষ  হয় শ্রমিক আন্দোলন এবং শুরু হয় শ্রমিক দিবসের যাত্রা।

প্রাথমিকভাবে ঐ সময়টাতে শ্রমিক আন্দোলন শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত অবিরতভাবে চলেই যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই শ্রমিক আন্দোলনের পথ। পত্রিকা খুললে, সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিড ওপেন করলেই দেখা যায় ওমুক গার্মেন্টস কর্মীরা, পাটকল কর্মীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে পাঁচ মাস, সাত মাস বেতন না পাওয়ার জন্য। এ চিত্র পৃথিবীর সর্বত্র এখন ডাল ভাতের মতো কমন ব্যাপার হয়ে গেছে। কিন্তু আর কতকাল চলবে এই না পাওয়ার জন্য লড়াইয়ের সীমানা। কবে হবে এর শেষ ? কোথায় আছে এর সমাধান?  আদৌও কি ফিরে আসবে কার্ল মার্ক্সের সেই স্বপ্নের কমিউনিজম? 

এই প্রশ্নের উপর ভর করে চলেছে শ্রমিকদের অধিকার  না পাওয়া বেদনা যন্ত্রণা। আমরা আসলে কেউই জানি না এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের কতটা কাছাকাছি আছে। আসলে কবে সেই উত্তর গুলো হাত ছানি দিয়ে ডাকবে তাও জানি না। তবে আমরা জানি, এবার এই আন্দোলনের নামে রাজপথ অবরুদ্ধ, শ্রমিকের কষ্টের গ্লানি, এবং মালিক শ্রেণির অত্যাচার এবার শেষ হওয়া দরকার। কোনো কিছুর শুরু থাকলে তার শেষও আছে। আমরা আশাবাদী, করোনা মহামারীকে জয় করে এবং অচিরেই শ্রমিক আন্দোলন নামক লড়াইয়ের সমাপ্তি শেষ করে একটা সুস্থ, স্বাধীন ও পবিত্র পৃথিবী মানবজগতে উপহার দিতে পারবো।

লেখক: ফারহানা ইয়াসমিন, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। 


/ইই
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন