ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

“মাকে পুলিশে নিয়ে গেছে, তোমরা আমার মাকে এনে দাও ”

“মাকে পুলিশে নিয়ে গেছে, তোমরা আমার মাকে এনে দাও ”
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পুলিশ আমার মাকে ধরে নিয়ে গেছে । মাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না । তোমরা আমার মাকে এনে দাও । এ কথাগুলো বলতে বলতে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলে ছয় বছরের শিশু মো. আলিফ ।

আলিফের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে । তার বাবার নাম মো . মিরাজ হোসেন ( ২৮ ) । মায়ের নাম মোসা . নূপুর আক্তার ( ২৭ ) । আলিফ উপজেলা সদরের বাউফল দাসপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী ।

আলিফের বাবা মিরাজকে মারধরের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার মা নূপুর আক্তার, নানী মোসা . রেহেনা বেগম ( ৪৫ ) খালা মোসা . আকলিমা বেগমকে ( ২২ ) গত শনিবার বিকেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রোববার সকালে কারাগারে পাঠায় । আদালত রেহেনা বেগমকে জামিন দেন । নূপুর ও আকলিমাকে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন । তাঁরা কারাগারে আছেন ।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , দাসপাড়া গ্রামের মিরাজ ও নূপুরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল । একপর্যায়ে পরিবারের সম্মতি ছাড়াই ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর তাঁরা দুজনে বিয়ে করেন । তাঁদের সংসারে রয়েছে ছয় বছর বয়সের আলিফ নামে এক পুত্র সন্তান । সংসার জীবনে তাঁরা সুখেই ছিলেন ।

একপর্যায়ে মাদরাসা অধিপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে মিরাজের চাকুরি হয় । সেই সুবাধে মিরাজ ঢাকায় থাকেন । দুই বছর আগে স্ত্রী নূপুরকে না জানিয়েই মিরাজ দ্বিতীয় বিয়ে করে । শুরু হয় পারিবারিক কলহ । দ্বিতীয় স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাড়িতে এসে প্রায়ই নূপুরকে মারধর করতেন মিরাজ । নূপুরের শশুর বাড়ির লোকজন মিরাজের পক্ষ নেয় । তাঁদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০ - ২৫ দিন আগে বাবার বাড়িতে এসে ওঠেন নূপুর ।

সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল ( গত বৃহস্পতিবার ) রাত সাতটার দিকে নূপুরের বাবার বাড়িতে মিরাজ গিয়ে নূপুরকে মারধর করতে থাকে । তাঁকে রক্ষা করতে নূপুরের মা রেহেনা বেগম ও বোন আকলিমা এগিয়ে গেলে তাঁদেরকে মারধর করে । এক পর্যায়ে তাঁরা ( নূপুর , রেহেনা ও আকলিমা ) প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুললে মিরাজ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন । ওই ঘটনায় মিরাজের বোন হেপী বেগম ( ৩২ ) বাদী হয়ে মিরাজের স্ত্রী , শাশুড়ি ও শ্যালিকাসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে বাউফল থানায় মামলা করেন । ওই মামলায় সাাক্ষী করা হয়েছে সাত ব্যক্তিকে । যাঁরা সবাই মিরাজের স্বজন ।

মিরাজের একমাত্র ছেলে আলিফ বলে ,‘ আমার মায়ের কোনো দোষ নাই । সব দোষ বাবার । ’

স্থানীয় মো . খলিলুর রহমান ( ৪২ ) বলেন , মিরাজের স্বভাব চরিত্র ভালো না । শুনেছি দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে প্রায়ই নূপুরকে মারধর করা হত । গত বৃহস্পতিবার মিরাজ তাঁর স্ত্রী নূপুরকে মারতে থাকে । তখন নূপুরের মা ও বোনের প্রতিবাদের মুখে পালিয়ে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চোখের ওপরের অংশে আঘাত পেয়েছে । সেই ঘটনায় নূপুর ও তাঁর বোন আকলিমা কারাগারে আছেন । এটা খুবই কষ্টদায়ক । খলিলুরের মত এ ঘটনায় অনেকেই মিরাজের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।

এ বিষয়ে মিরাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি । তবে মামলার বাদী ও মিরাজের বোন হ্যাপী বেগম বলেন , এ বিষয়ে তিনি ভালো বলতে পারবেন না । মিরাজই ভালো বলতে পারবেন । ’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন , ঘটনা ঘটার পরে সাক্ষীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছে । সাক্ষীরা সবাই তাঁদের স্বজন বলেও স্বীকার করেন।

বাউফল থানার পরিদর্শক আল মামুন বলেন ,‘ মামলাটি তদন্তাধীন । তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে । ’


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন