পত্রিকা বিক্রিতে পেট চলে না, খেতে হচ্ছে আধপেটা


কাগজের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে এমন সঙ্কায় সংবাদপত্রের গ্রাহকেরা দোকানপাট, বাসা-বাড়ি এবং অফিসে ছাপা কাগজ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ওদিকে আবার লকডাউন। ফলে শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে প্রিন্ট পত্রিকার সার্কুলেশন। অনলাইনেই বেশিরভাগ সময় খবর পড়ছেন তারা। এতে পত্রিকা বিক্রিতে নেমেছে বিরাট ধ্বস। কাজ হারিয়ে পথে বসেছেন পত্রিকার হকাররা।
পত্রিকা বিক্রি করে ৫ সদস্যের পরিবারের হাল ধরেছেন বরিশাল নগরীর বটতলার বাসিন্দা খোকন। পেটের দায়ে লকডাউনেও এজেন্সি থেকে নিয়মিত পত্রিকা আনেন। বন্ধ দোকানপাট ও জনশূন্য রাস্তায় সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায়ও বিক্রি হয় না পত্রিকা। আগে প্রতিনিধি তার রোজগার ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কিন্তু এখন রোজগার গিয়ে ঠেকেছে ২০০ টাকায়। তাই বাধ্য হয়েই দুবেলা ভাতের জন্য হাত পাতছেন পথিমধ্যে পাওয়া দুই একজন পথচারীদের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাবাজের ফুটপাত দিয়ে হাটছিলাম। ফাঁকা রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। দু' একটি গাড়ি চলছে। হঠাৎ ডান হাত বাড়িয়ে এক লোক বলে উঠলো ‘ভাত খামু টাহা (টাকা) দেন, বাড়িতে মা আছে’। চোখ ফিরে তাকাতেই দেখলাম জীর্ণশীর্ণ জামা কাপড় পড়া এক লোক, বাম হাতে এক বান্ডেল পত্রিকা, চোখে হতাশার ছাপ। বয়সের ভাড়ে স্বাভাবিকভাবে হাটতে পারছেন না। কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্নতা। বলছিলাম নগরীর বটতলার বাসিন্দা খোকনের কথা।
এই মানুষটিকে খুব সহজেই সবার থেকে আলাদা করা যায়। বরিশাল নগরীর অন্যান্য পত্রিকার হকার থেকেও তাকে সে আলাদা । নগরীর এমন অনেক হকারকে চিনি যারা কাজের চাপ আর সময়ের সাথে পালা দিতে না পেরে দাপিয়ে বেড়ান সাইকেল, স্কুটি নিয়ে। অথচ তাদের আড়ালে খোকন যেন এক ভিন্ন জগতের মানুষ। দু পা’ই যেন যান্ত্রিক চাকা। পায়ে হেটে বরিশাল নগরীর অলিগলিতে বিক্রি করেন পত্রিকা।
কিছুক্ষণ আলাপের পর জানা গেল ছোট দুই ছেলে, স্ত্রী আর মা'কে নিয়ে কঠিন টানাপোড়নে চলছে অভাবের সংসার। কাজ করার মত কর্মশক্তি নেই তবুও অন্যের কাছে হাত না পেতে পত্রিকা বিক্রি করে চালিয়ে নিচ্ছেন সংসার। কিন্তু এবার লকডাউনে ভাটা পড়েছে রোজগারে। উপায় না পেয়ে পেটের দায়ে হাত পেতেছেন মানুষের দ্বারে। এমন অভাবের দিনেও পাশে নেই কেউ, নেই সরকারি কোন সাহায্য সহযোগীতা। তাই আক্ষেপ করে বলেন, পত্রিকা বিক্রি খুব খারাপ চলে। বাসায় ৫ জন লোক। একাই সংসার চালাই। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ, আয় নাই। সংসার চলেনা। দেখার কেউ নেই। খেয়ে না খেয়ে থাকলেইবা কার কি!
নগরীর ডিসপেনসারির দোকানদার তাসনিম বলেন, হকারসহ বিভিন্ন হাত ঘুরে পত্রিকা পৌঁছায় বলে তার দোকানে ছাপানো পত্রিকা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হকারের হাতের ছোঁয়া লাগবে, সে তো বাইরে থাকে। শুধু হকার না, সেটা বিভিন্ন হাত থেকে তারপর আমাদের দোকানে পৌঁছে, যা এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করলে একেবারেই উচিত না। তাই সবদিক বিবেচনা করেই বন্ধ রাখা হয়েছে আপাতত।’
এইচকেআর
