ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি

রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

রমাযান হল, বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস। অসংখ্য নিয়ামত ও অবারিত সুযোগ সমৃদ্ধ মহিমান্বিত মাস এটি। এ মাসে রয়েছে সিয়াম, কিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, উমরা, দান-সদকা, চরিত্র সংশোধন এবং মহান রবের দরবারে দুআ-আরোধনার মাধ্যমে গুনাহ মোচন করত: জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির এক অতুলনীয় সুযোগ।

নিম্নে এ মাসের কতিপয় বৈশিষ্ট ম-িত দিক ও করণীয় তুলে ধরা হল:

মহান আল্লাহ্ বলেন, রমাযান মাস যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, লোকেদের পথ-প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুপষ্ট বর্ণনারুপে এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে (সুরাহ বাক্বারাহ্-২/১৮৫)। 

রসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘রমাযান মাসে শুধু কুরআনুল কারীম’ই নয়, এ মাসে ইব্রাহীম আঃ এর সহীফা, তাওরাত-যাবুর, ইঞ্জিলসহ সকল আসমানী কিতাব দুনিয়াতে নাযিল হয়েছে (তারবানী, ছহীহ আল-জামে)।

সিয়ামের ফযীলত: 


আবূ হুরাইরাহ রাযি. বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি  ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমাযানের সিয়াম পালন করবে, মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা তার পূর্বের গোনাহসমূহ মাফ করে দিবেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৮৬২)।

ইবনে আব্বাস রাযি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক দানশীল, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম রমাযানে সর্বাধিক দানশীল হতেন, রমাযানে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম এর সাথে জিব্রাঈল আ: এর সাথে সাক্ষাৎ হতো, তখন তিনি জিব্রাাঈল আ: এর সাথে কুরআন পাঠ করতেন। জিব্রাঈল আ: এর সাথে সাক্ষাৎকালীন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম হতেন মুক্ত বায়ুর তুলনায় অধিক কল্যাণময় ও দানশীল (সহীহুল বুখারী-৩২২০)।

বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী’র জন্য সিয়াম: 

বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর জন্য রমাযানের সিয়াম একটি ঐচ্ছিক বিষয়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, সিয়াম যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এই যে, তারা এর পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্থকে খাদ্য দান করবেন (সূরা বাক্বারা-২/১৮৪)।

রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম এর সাহরী:


রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম সাহরী করতেন অনেক দেরিতে, অর্থাৎ সুবহে সাদিকের কিছু পূর্বে সাহরী সমাপ্ত করতেন, তিনি ভেজা খেজুর দিয়ে সাহরী করা পছন্দ করতেন এবং তিনি সর্বদাই জাঁকজমকহীন স্বাভাবিক সাহরী গ্রহণ করতেন। 

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সাহরী গ্রহণ কর (ইবনে হিব্বান : ৩৪৭৬, হাদিসটি হাসান)।

‘‘তোমরা সাহরী খাবে, কেননা সেহরীতে বরকত রয়েছে’’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত-১৮৮৫)।

রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম দ্রুত ইফতার করে নিতেন: 


তাবেয়ী-আবূ আতিয়্যা রহ. বলেন, আমি একদিন উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রাদ্বি.-আনহা এর নিকট গিয়ে বললাম, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম এর দুই জন সাহাবী’র মধ্যে একজন ইফতার তাড়াতাড়ি করতেন (অর্থ্যাৎ সূর্য ডুবার সাথে সাথে; যেমনটি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাত'দেরকে নির্দেশ দিয়েছেন) এবং তাড়াতাড়ি (অর্থ্যাৎ আউয়াল ওয়াক্তে) সলাত আদায় করেন। এবং আরেকজন ইফতার দেরী করে (অর্থ্যাৎ সূর্য ডুবার পরে কিছু সময় অতিবাহিত করে, যেমনটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দেন নি) করেন এবং দেরী করে (অর্থ্যাৎ আউয়াল ওয়াক্ত কে বাদ দিয়ে আরও পরে) সলাত আদায় করেন। 

আয়িশাহ রাদ্বি.-আনহা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তাদের মধ্যে কে তাড়াতাড়ি ইফতার করে এবং তাড়াতাড়ি সলাত পড়ে?’’ তাবেয়ী আবূ আতিয়্যা তাঁকে বললেন, সে হলো আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ। এর পরেই আয়িশা রাদ্বি.-আনহা বললেন: ‘‘নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম’ও তাড়াতাড়ি (সুর্য ডোবার সাথে-সাথেই) ইফতার করতেন এবং তাড়াতাড়ি (আউয়াল ওয়াক্তে) সলাত আদায় করতেন’’ (সহীহ মুসলিম, মিশকাত ১৮৯৯)। 

রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম সিয়াম রেখেও মেসওয়াক করতেন। আমের বিন রাবিয়া হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম কে অসংখ্যবার সিয়াম অবস্থায় মেসওয়াক করতে দেখেছি (তিরমিজি ৭২৫)।

রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী, আহমাদ। স্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম পুরো দিবস জুড়েই মেসওয়াক করতেন। দিবসের সূচনা বা সমাপ্তির মাঝে কোন প্রকার পার্থক্য করতেন না’।

সিয়ামরতবস্থায় ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেললে সিয়াম নষ্ট হয় না: আবূ হুরাইরাহ রাযি.। নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি রমাযানের সিয়াম রাখা অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে বা ভূলবশত পানীয় গ্রহণ করে, সে যেন সিয়াম পূর্ণ করে।  নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেন, কেননা আল্লাহ্ তা‘য়ালাই তাকে খাইয়েছেন বা পান করিয়েছেন, বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৯০৬।

সিয়ামের হারাম কাজ গুলি হলো: (ক) যাবতীয় মিথ্যা কথাবার্তা, (খ) মালের খিয়ানত করা, (গ) গালাগালি করা, (ঘ) অশ্লীল কথা-বার্তা বলা, (ঙ) ধোঁকা দেওয়া, (চ) অশ্লীল কথা শুনা।

সিয়াম ভঙ্গের কারণ: (১) খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করলে, (২) স্ত্রী সহবাস করলে, (৩) যে সকল স্যালাইনে খাদ্যের উপ¯ি’তি রয়েছে তা গ্রহণ করলে, (৪) যে কোন ধরনে যৌন কাজ করলে, (৫) ই”ছাকৃতভাবে বমি করলে, (৬) শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করলে, (৭) মহিলাদের হায়েয বা নিফাস হলে। এ সকল কাজ গুলির যে কোনো একটি যদি অনি”ছাকৃতভাবে হয়, তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না।

মহান আল্লাহ্ সুবহানাল্লাহ্ তা‘য়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটির দোআ শিখিয়ে দেন:


‘‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি তাহলে আমাদের পাকড়াও করবেন না’’(সূরা : ২/২৮৬) ।

তিনি আরো বলেন: ‘‘ভুল করে তোমরা যা করে ফেলো সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই। কিন্তুু তোমাদের অন্তর যা ইচ্ছা করে তার কথা ভীন্ন’’ (সূরা আহযাব: ৫)।

আলহামদুলিল্লাহ্। সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ্ জন্য। দরূদ ও সালাম নাযিল  হোক আল্লাহর রসুলের উপর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

মামুন বিন শহীদুল ইসলাম
খতিব, আহালে হাদিস জামে মসজিদ, এন হোসেন কমপ্লেক্স
পুলিশ লাইন্স, বরিশাল।


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন