এই গরমে কী করবেন, কী খাবেন


গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। রোদের তেজ যেন বেড়েই চলেছে। তবে থেমে নেই জনজীবন। নানা প্রয়োজনে ঝাঁজাল রোদ মাথায় নিয়েই বেরোতে হচ্ছে বাইরে। এ জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। প্রচণ্ড গরম বা সূর্যের আঁচে যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। গরমের উপযোগী খাবার ও সাবধানে চলাফেরা এ ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা বেশি করে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোজ তিন লিটারের বেশি পানি খাওয়ার প্রয়োজন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাদ্যতালিকায় এমন সব খাবার থাকা দরকার, যা পূরণ করবে পানির অভাব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রচুর পানি খেতে হবে। যেহেতু গরমের কারণে শরীর থেকে লবণ-পানি বের হয়ে যায়, তাই সাধারণ পানি খাওয়ার চেয়ে ওরস্যালাইন বা লবণ-পানি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। এ ছাড়া ডাব খাওয়া যেতে পারে।’
গরমে সুস্থ থাকতে বাইরে গেলে রোদের আঁচ যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। আর যাঁদের রোদে কাজ করতে হয়, তাঁদের উচিত একটানা কাজ না করে কিছুক্ষণ পর পর ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়া।’
গরমে বেড়েছে মৌসুমি শরবত ব্যবসায়ীদের ভিড়। নগরের বিভিন্ন স্থানে লেবুসহ নানা ফলপাকড় দিয়ে শরবত বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব শরবতের স্বাস্থ্যমান ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এগুলো পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আলেয়া মাওলা।
আলেয়া মাওলা বলেন, ‘গরমে সুস্থ থাকতে হলে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গরুর মাংস যথাসম্ভব কম খেতে হবে। মাছ, শাক-সবজি, ভর্তা ও ভাজি—এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দেশীয় ফল বেশি খেতে হবে। এতে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে।’
শরীর সুস্থ রাখতে গরমের সময় তিনবেলা কী কী খাবার খাওয়া প্রয়োজন, প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার। তিনি বলেন, সকালের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত আটার রুটি, ডিম, হালকা তেল দিয়ে ভাজা সবজি। এ ছাড়া যাঁরা চিড়া খেতে পছন্দ করেন, তাঁরা কলা ও দই-চিড়া খেতে পারেন। এতে পেট ঠান্ডা থাকবে।
দুপুরে খিচুড়ি ও পোলাও জাতীয় খাবার না খেয়ে সাদা ভাত খাওয়া উত্তম। সঙ্গে পাতলা ডাল, ঝোল দিয়ে রান্না করা মাছ, টক দই দিয়ে সালাদ, শাক-সবজি থাকতে পারে। কেউ চাইলে রুচি আনার জন্য যেকোনো একটি চাটনি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। রাতের ও দুপুরের খাদ্যতালিকা একই হবে। তবে রাতে কিছুটা কম খাওয়া উচিত। খাওয়ার পর মৌসুমি ফল যেমন আম, তরমুজ ও জামরুল ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের খাদ্যতালিকা আলাদা বলে জানালেন আখতারুন নাহার। শিশুদের জন্য বাইরের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো বলে মত দিলেন তিনি। পাতলা পায়েস বা সুজি খাওয়ানোর পরামর্শ দিলেন। বললেন, পানির অভাব পূরণে শিশুদের দিনে অন্তত একবার লেবু, মাল্টা, কমলা বা অন্য ফলের রস খাওয়ানো উচিত। সকালে যে সব শিশু রুটি খেতে চায় না, তাদের জেলি দিয়ে পাউরুটি দেওয়া যেতে পারে।
গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে দিনে চার থেকে পাঁচবারও গোসল করে থাকেন। তবে দিনে দুবারের বেশি গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর বললেন আখতারুন নাহার। বার বার গোসল না করে সারা দিনে কয়েকবার হাত-মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
টিএইচএ/
