ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

পার্থিব কোলাহলমুক্ত এই সময়টাই ইবাদতের সেরা সময়

 পার্থিব কোলাহলমুক্ত এই সময়টাই ইবাদতের সেরা সময়
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মুফতি এইচ এম আবু বকর সিদ্দীক :

বিশ্বের এই চরম ক্রান্তিলগ্নেই রমজানকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বমুসলিম। রমজানের রহমত ও বরকত লাভে ধন্য হয়ে পৃথিবী আবারও ঘুরে দাঁড়াবে- এই স্বপ্ন দেখে হতাশ হৃদয়ে প্রশান্তির বাতাস বইছে তাওহিদে বিশ্বাসী সব মুমিনের। 

কোভিড-১৯ এর কারণে এবারের রমজান আয়োজনের দিক থেকে উৎসবমুখর না হলেও তাৎপর্যের বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

করোনা ও লকডাউনের কারণে জনজীবনে স্বস্তি নেই, গতি নেই জীবনযাত্রায়ও। কিন্তু পার্থিব কোলাহলমুক্ত এই সময়টা একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য হতে পারে ইবাদতের সেরা সময়। 

অফিস, আদালত, ব্যবসা, রাজনীতিসহ বাইরের জঞ্জালমুক্ত এবারের রমজানকে চমৎকার পরিকল্পনার আলোকে ঢেলে সাজালে এটি জীবনের সেরা রমজান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। 
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সচেতন করে ইরশাদ করেছেন, তোমরা ব্যস্ততার আগেই অবসরকে মূল্যায়ন করো। (সহীহ বুখারী) 

অতএব, করোনাকালীন এই চমৎকার অবসরতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পরকাল নির্মাণে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারি। 

প্রিয় পাঠক, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের ফজিলত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, যে এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখবে মহান আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব গোনাহ মাফ করে দিবেন।  

রোজার পাশাপাশি তারাবির প্রতি উৎসাহিত করে তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় তারাবির সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

সুতরাং রমজানের মৌলিক দুটি ইবাদত তথা দিনের রোজা ও রাতের তারাবির সালাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা বিভিন্ন আমল করতে পারি। 

৫ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবি জামাতে আদায় করা। মসজিদের জামাতে বাধ্যবাধকতা থাকলে ঘরের ছোটোবড় সব সদস্যকে নিয়ে ৫ ওয়াক্ত সালাত ঘরেই আদায় করুন। 

সেক্ষেত্রে বাবা কিংবা সংসারের  দায়িত্বশীল ব্যক্তি ইমামতি করতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ হাফেজে কুরআন থাকলে ঘরে অবশ্যই তারাবির সালাতে খতমে কুরআনের আয়োজন করুন। একাধিক ঘর বা ফ্ল্যাটের লোকজনকে নিয়েও এই আয়োজন হতে পারে। 

জামাতে সালাত আদায়ের পরে কিছুক্ষণ হাদিস পাঠ হতে পারে। রমজানের ফজিলত, তিলাওয়াতের ফজিলত ও সময় যাপনের নির্দেশনামূলক হাদিসের পাঠ বেশি করা। 

দিনের অবসর সময় ব্যক্তিগত তিলাওয়াত, ঘরের লোকদের তিলাওয়াত শুদ্ধকরণ, সিরাত অধ্যয়ন, বুজুর্গানে কেরামের রমজান পালন সংক্রান্ত বইসহ যেকোনো প্রশংসনীয় অধ্যয়নে ব্যয় করা যেতে পারে। তবে কখন কোন আমল করা হবে এমনকি কতটুকু সময় হবে অবশ্যই তার সময়সূচি নির্দিষ্ট থাকা চাই। 

মিথ্যা কথা, চোগলখোরি, ঝগড়াঝাটি, বেপর্দা চলাফেরা বর্জনের অঙ্গিকার করা। কেননা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নাই।
 
মোবাইল, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ সোস্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করা যাবেনা। কেননা এমন অবসর ও মুক্ত রমজান আমাদের জীবনে আর নাও আসতে পারে তাই আমলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার দুটি পা ততক্ষণ পর্যন্ত নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার জিন্দেগি কোথায় ব্যয় করেছ? জ্ঞানানুসারে কি আমল করেছ? সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ আর কিসে খরচ করেছ এবং তোমার শরীরকে কী কাজে নিঃশেষ করেছ?’ তিরমিজি। 

সাধ্যানুযায়ী প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেওয়া। যাতে করে আমাদের আশপাশের কেউ না খেয়ে না থাকে। কেননা ভোগ নয়, ত্যাগই রমজানের আসল শিক্ষা। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন, যে লোক একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য সেই রোজাদারের মতই সওয়াব লিখা হবে। কিন্তু তাতে মূল রোজাদারের সওয়াব হতে এক বিন্দুও কম করা হবে না।' নাসাঈ, তিরমিজী। 

এছাড়াও তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সাথে ভোজন করায় আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউজ হতে পানি পান করাবেন। ফলে জান্নাতে পবেশ করা পর্যন্ত সে কোন তৃষ্ণার্ত হবে না।’ মিশকাতুল মাসাবীহ।

আমাদের স্বভাবে অসংখ্য বক্রতা আছে। কেউ পূর্ণ মার্জিত নই। তাই খুঁজে খুঁজে রমজান মাসে নিজের অসৎ গুনগুলোকে একে একে রহিত করার চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে দৈনন্দিন যদি আমরা একটা করে মন্দ স্বভাব বর্জনের চেষ্টা করি তাহলে মাস শেষে এটা আমাদের জন্য বিরাট অর্জন হয়ে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। 

এছাড়াও আপনি নিজেকে কিংবা পরিবারের সদস্যদেরকে বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ ছোটবড় আমলের চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন। 

কর্পোরেট কোম্পানিগুলো হরেকরকম চ্যালেঞ্জ করে থাকে, যেগুলোর তুলনা আখেরাতের আমলের সাথে একদমই গৌণ। 

সুতরাং আমরা ওসব চ্যালেঞ্জ নয় বরং নিজের চরিত্র, আমল, সালাত, তিলাওয়াত, রোজাসহ ব্যাক্তি ও পারিবারিক জীবনকে সুন্দর করার চ্যালেঞ্জ নিতে পারি। সেটা হতে পারে অন্য কারোর সাথে কিংবা নিজেকেই নিজে ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ।
 
রমজান আমাদের মাঝে এ সকল শিক্ষা নিয়েই আসে। ব্যস্ত জীবনে আমল ও আখলাকের চর্চা করাই রমজানের আসল উদ্দেশ্য। 

মহান আল্লাহ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য আমাদের জীবনে ধারণ করার তাওফিক দিন। আমীন।


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন