তারেক শামসুর রহমান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার


সত্তুরের দশকে আমি যখন দৈনিক বাংলার মেডিক্যাল রিপোর্টার ছিলাম, তখন তারেক শামসুর রহমান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার। আনু মোহাম্মদ ক'দিন পরে জয়েন করলেন রিপোর্টার হিসাবে। আমরা তিনজন মূলধারার সাংবাদিক ছিলামনা তাও সাংবাদিকতার কার্ড ছিলো আমাদের।
তারেক আর আনু মোহাম্মদ আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে লিখতো, আর আমার রিপোর্টিং ছিলো মেডিক্যালের উদ্ভট সব সংবাদ নিয়ে। ছেলে মেয়ে হয়ে যাওয়া 'নাসির এখন পুরোপুরি নাসরীন' অথবা 'সে মরা মানুষের কলজে মাংস খায়'- খলিলুল্লাহর কাহিনী।
তারেক আর আমি ছিলাম একই ব্যাচের মেট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট, তাই ধীরে ধীরে দোস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, আপনি থেকে তুমিতে। যৌবনে অনেক হ্যান্ডসাম ছিলো তারেক। দৈনিক বাংলার জহির ভাই আর তারেক দুজনকেই সিনেমায় নামানো যেতো বলে মজা করতাম আমরা। জহির ভাই প্রায় বছর পঁচিশেক আগে চলে গেলেন পরপারে।
ঢাকায় আসলে প্রতিবারই ভাবি এবার তারেক আর আনু মোহাম্মদের সাথে দেখা করবোই। তিনজনে আগের মতো আড্ডায় মাতবো। তারেক উত্তরাতে থাকতো শুনেছিলাম ঠিকানা পাইনি। বিয়ে করেছে, কন্যা সন্তান আছে কে যেন বলেছিলো। একবার ভেবেছিলাম যাই সাভার, জাহাঙ্গীর নগর ভার্সিটিতে দেখা করে আসি। আনু মুহাম্মদকে খুঁজলাম, সে তখন রামপালের কয়লা যুদ্ধে ব্যস্ত। চাইলেই সবাই সবার দেখা পায়না বা দেখা করাও হয়না, তবুও কিছু স্মৃতি থাকে মানুষের মনে যেগুলি ভোলাও যায়না।
আজকে অধ্যাপক ডক্টর তারেক শামসুর রহমানের মৃতদেহ দরজা ভেঙে উদ্ধার করার পরে ব্রিফিংয়ে উত্তরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শচীন মৌলিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় পরে যান, বমি হয়, রক্ত বমির মতো। আজ সকালে তারেকের নিয়মিত গৃহসহকারীর কলিং বেল চাপায় দরজা না খোলার কারণে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করার পরে অধ্যাপক তারেকের লাশ দেখতে পায় বাথরুমে পরে আছে।
মৃত্যুর কারণ যাই হোক, তারেক আর নেই এই পৃথিবীতে। আমাদের সেই সময়ে প্রথম গণপিটুনিতে একজন মানুষকে মারা নিয়ে বিচিত্রা একটি কভার স্টোরি করেছিলো। মাসুদ রানার লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন সেই মৃত লোকটির মুখের ছবি তুলেছিলেন। দৈনিক বাংলা অফিসে সেই রিপোর্ট দুজনে মিলে পড়ছিলাম। তারেক চা খেতে খেতে বলেছিল, দেখো, মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে।
তারেকের গুণমুগ্ধ ছাত্ররা তাকে নিয়ে গর্ব করে, তারেক স্যার খুব ভালো পড়ায় তার সাবজেক্ট, কত দৈনিকে তার মূল্যবান কতো লেখা প্রকাশিত হয়। অথচ তারেকের অপ্রকাশিত মৃত্যু এমন নিঃশব্দে এসে গেলো যে সে নিজেও জানতে পারেনি মরণ কখন পৌঁছে গেছে তার বন্ধ ঘরে।
আল্লাহ তারেক শামসুর রহমানকে রহম করুন, ক্ষমা করুন, বেহেস্ত নসীব করুন।
লেখা: ডা. আরিফুর রহমানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
কে.আর
